ঢাকা রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫

৫০০ বছরের সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন ছোট সোনামসজিদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম
ছোট সোনামসজিদ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মসজিদের নাম ছোট সোনামসজিদ ৷ কথিত আছে, মসজিদের গম্বুজ ছিল সোনায় মোড়ানো। সেই সোনায় চোখ যায় চোরের দলের। চুরিও করে নিয়ে যায় সেই সোনা ৷ সোনায় মোড়ানো গম্বুজের কারণেই নামকরণ হয় সোনামসজিদ। যদিও এই মতের পক্ষে ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয়দের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষেরাই এই মতে বিশ্বাসী। যদিও লেখক ও গবেষকরা এ বিষয়ে দ্বিমত। ছোট সোনামসজিদের পাশেই বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে আরও একটি মসজিদ। যার নাম বড় সোনামসজিদ ৷ একই সময়ে তৈরি হওয়ায় মসজিদ দুটির নাম ছোট ও বড় সোনামসজিদ।

সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে ওয়ালি আহমেদ নির্মিত ইসলামের ঐতিহ্য ধারন করে গত প্রায় ৫০৬ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই ছোট সোনামসজিদ। যা হোসেন শাহ স্থাপত্য রীতিতে তৈরি মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন।

প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল, যা বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাজবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৪-১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে) ওয়ালি মোহাম্মদ আলি নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

ছোট সোনামসজিদ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মসজিদের মাঝের দরজার উপর প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। তবে শিলালিপিতে নির্মাণের সঠিক তারিখ সম্বলিত অক্ষরগুলি মুছে যাওয়ায় সঠিক নির্মাণকাল জানা যায়নি।

ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের মতে, সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসেবে পরিচিত ছোট সোনামসজিদের বাইরের দিকে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল, সূর্যের আলো পড়লে এই রং সোনার মতো ঝলমল করত। এই থেকেই এর নামকরণ হয় সোনামসজিদ।

তবে অনেকের মতে, সুলতানের স্ত্রীর নাম ছিল সোনাবিবি, সেই থেকেও এই নামকরণ হতে পারে। গম্বুজের উপরে সোনার প্রলেপ দেয়া ছিল বলেও এই নাম হতে পারে বলে অভিমত অনেকের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আরও একটি মসজিদ রয়েছে, যেটি বড় সোনামসজিদ নামে পরিচিত।

জানা যায়, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে পাল বংশের রাজাদের সময় থেকে প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ১১৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম শাসকরা গৌড় অধিকারের পরেও বাংলার রাজধানী ছিল এটি। পরে ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বাংলার রাজধানী বছরতিনেকের জন্য স্থানান্তর করা হয় পাণ্ডুয়ায়। পরে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আবার ফিরে আসে তা গৌড়ে।

প্রাচীন এ জনপদ বাংলার রাজধানী ছিল বলে বহু অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল এই অঞ্চলে। সুলতানি ও মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদ, মাদ্রাসাসহ নানা মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের মধ্যে ছোট সোনামসজিদ এক অপূর্ব নিদর্শন।

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। উচ্চতা ২০ ফুট। এর দেয়ালগুলো প্রায় ৬ ফুট পুরু। দেয়ালগুলো ইটের কিন্তু মসজিদের ভেতরে ও বাইরে এরা পাথর ।