ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন সাতক্ষীরার চিংড়িচাষিরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম

দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার চিংড়িচাষিরা। অর্থনীতিতে দেশের মোট রপ্তানিজাত চিংড়ির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় সাতক্ষীরায়। প্রতি বছর আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়।

গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের তুলনায় অন্তত ১৫০ কোটি টাকা বেশি।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সত্তর-আশির দশকের দিকে শুরু হয় সাতক্ষীরায় লবণ পানির চিংড়ি চাষ। বাগদা, গলদা, হরিণা, চাকা ও চেম্বিসহ বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি চাষ হয়। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে সাতক্ষীরার ছয়টি উপজেলায় ৫৯ হাজার লবণ পানির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়, যা থেকে ২৭ হাজার টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদিত এসব বাগদা চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা।

মোট উৎপাদিত চিংড়ির ৯০ শতাংশ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় এবং বাকি ১০ শতাংশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ হয়েছে।

এর আগে ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল, যা থেকে রপ্তানি আয় হয় ১ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৫০ কোটি টাকা রপ্তানি আয় বেড়েছে।

কভিড-পরবর্তী এ জেলায় বাগদা উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমন রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জেলার চিংড়িচাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

আশাশুনি উপজেলার সরাপপুরের চিংড়িচাষি রাজ্যেশ্বর দাশ জানান, প্রায় চার দশক ধরে চিংড়ি চাষ করেন তিনি। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ২ হাজার বিঘা ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। উৎপাদন খরচ উঠিয়ে প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। তবে প্রথম পর্যায়ে কিছু মাছ মারা যায়। তা না হলে লাভের পরিমাণটা আরও বাড়ত। চিংড়ি উৎপাদনে সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের।

সাতক্ষীরা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, জেলার উৎপাদিত বাগদা চিংড়ির চাহিদা রয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। তবে কভিডের সময় রপ্তানি বন্ধ থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদা বেড়েছে। এখন দেশের বাজারে বাগদা চিংড়ি ৮০০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘২০২৩-২৪ মৌসুমে সাতক্ষীরায় রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় অন্তত ২ হাজার টন বেশি। উৎপাদিত এসব বাগদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা হারে গড় রপ্তানি মূল্য ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা। গেল মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়, যা থেকে রপ্তানি আয় ছিল ১ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা।

এ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাগদা চিংড়িতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫০ কোটি টাকা। উৎপাদন এবং রপ্তানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চিংড়িচাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’