ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

৯ দিনের ছুটির ফাঁদে বেনাপোল স্থলবন্দর, বাণিজ্যে ধাক্কা!

মো. জামাল হোসেন, বেনাপোল
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে টানা ৯ দিন দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ২৯ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল টানা ৮ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে এ পথে।

এর ফলে স্থবির হয়ে পড়বে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম। ৯ দিনের ছুটিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। আগামী ৬ এপ্রিল (রোববার) থেকে যথারীতি কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম চলবে।

এদিকে, ঈদের দিন ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকবে দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মুকিতুল ইসলাম এক পত্রে এ তথ্য জানান। পত্রে টানা ৯ দিন কাস্টমস ও বন্দর বন্ধ থাকলেও (ঈদের দিন ব্যতিত) সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এ নির্দেশ পালন করা হলেও বেনাপোলসহ অন্যান্য কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনে তা পালন করা হয় না। এখানে বন্দর ব্যবহারকারীরা সবাই ছুটিতে চলে যাওয়ায় সবকিছু বন্ধ থাকে।

দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ৯০ ভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। মাত্র সাত দিনের এলসিতে পণ্য আনা যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮১ কিলোমিটার। আড়াই ঘণ্টায় চলে আসা যায় চেকপোস্টে। সে কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে থাকেন।

লম্বা ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে বিরুপ প্রভাব। এমনিতেই বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট লেগেই আছে। লম্বা ছুটির কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাঁচামালের সংকট দেখা দিতে পারে।

সীমান্তের দু’পাশের ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ছুটিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, আগামী ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে বন্ধ হয়ে যাবে বেনাপোল-পেট্রাপোলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি।

কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঈদ করতে রওনা দিবেন। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। তারা ঢাকা ফিরে না আসা পর্যন্ত কোনো পণ্যও খালাস নিবেন না।

আগামী ৬ এপ্রিল (রোববার) থেকে পুনরায় বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে টানা ছুটির কারণে সীমান্তের দু’পাশের বন্দরে ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বেনাপোলের মতোই পেট্রাপোল বন্দরেও ট্রাকজট রয়েছে। বন্দরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল বন্দর টার্মিনালে কয়েকশ পণ্যবোঝাই ট্রাক অবস্থান করছে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ আহসানুল কাদের ভূঁইয়া জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক থাকবে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত। আগের বছরগুলোতে ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারতে গেলেও এ বছর কোনো চাপ নেই।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিকেল থেকে ঈদের ছুটি হয়ে যাচ্ছে। ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা দিনে রাতে বন্দর এলাকায় টহল দিবে। পাশাপাশি বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বলা হয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে বন্দরের কর্মতৎপরতা বাড়বে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি রাসেল মিয়া বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দর এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিশেষ নজরদারি নেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে আমাদের পুলিশ সদস্যরা টহল দেবে গোটা বন্দর এলাকায়।