পঞ্চগড় সদর উপজেলায় সাহরিতে মাইক দিয়ে ডাকায় একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অপর পক্ষেরসহ ২৯ জন আহত হয়েছে। আহতদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের তেলিপাড়া নেছারিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে ওই এলাকার এক বাসিন্দার এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ওই মাদ্রাসার মসজিদের মাইকে প্রতিদিন সাহরিতে খেয়ে রোজা রাখার জন্য ডেকে দেওয়া হতো। সাহরিতে ডাকাডাকি নিয়ে প্রতিবেশী কায়েদে আজমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন প্রতিবাদ করেন। পরে কয়েক দিন মাইক বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ওই সমাজের বেশির ভাগ মানুষ মাইকে ডাকার দাবি জানালে আবারও মাইকে ডাকাডাকি শুরু হয়।
শনিবার বিকেলে বাজার করে ফেরার পথে মাদ্রাসা শিক্ষক আরিফ হাসান ও মুহতাসিম বিল্লাহকে আটক করেন কায়েদে আজম ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ সময় বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন জুতা দিয়ে এবং কায়েদে আজম লাঠি দিয়ে তাদের মারধর শুরু করেন।
খবর পেয়ে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা ছুটে এলে ওই দম্পতি ও তাদের স্বজনরা তাদেরও মারধর করে।
এ সময় মাদ্রাসার পরিচালকের মা গুলজান নেহার (৫০), তিন শিক্ষক ও ২১ জন ছাত্র আহত হন। অপর পক্ষের কায়েদে আজম ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও আহত হন। তাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাদ্রাসা ছাত্র রিশাদ বলেন, ‘আমি পানি খাচ্ছিলাম। এ সময় একজন এসে আমার হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এভাবে তারা আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্রদের মারধর করেছে।’
আরেক ছাত্র রেজওয়ান সরকার বলেন, ‘আমাদের দুজন শিক্ষককে মারধরের খবর পেয়ে আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরও নির্বিচারে মারধর করা হয়। আমাদের ঘর ভাঙচুর করা হয়।’
মাদ্রাসার শিক্ষক মুহতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘৫-৭ বছর আগে মাদ্রাসার জমি নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। এখন তারা সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু করে। মাইকে সাহরিতে ডাকার বিষয়ে তারা আপত্তি জানালে আমরা কিছুদিন মাইক বন্ধ রাখি। পরে বেশির ভাগ মানুষ ডাকার বিষয়ে দাবি জানালে পরে আবার ডাকা শুরু হয়। তবে মাইক অন্যদিকে ঘুরে দেওয়া হয়। এতে তারা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিকেলে আমরা ফেরার পথে আমাদের আটক করে মারধর শুরু করে। কায়েদে আজমের স্ত্রী জুতা দিয়ে এবং সে লাঠি দিয়ে মারধর করতে শুরু করেন।’
মাদরাসার পরিচালক বাকি বিল্লাহ আল আশরাফ বলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র থেকে শুরু করে আমার মাকেও তারা ছাড় দেয়নি। সবাই এখন হাসপাতালে। আমরা অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, ন্যায়বিচার পাব।’
অভিযোগ অস্বীকার করে কায়েদে আজম বলেন, ‘মাইকে ডাকাডাকিকে কেন্দ্র করে ওরা আমার স্ত্রীর নামে আজেবাজে কথা ছড়িয়েছে। আমরা মাইক একটু ওপরে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা উল্টো আমাদের বাড়ির দিকে মাইক ঘুরে দিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা সবাই আমাদের ওপর হামলা করেছে।’
কায়েদে আজমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘তারা উচ্চস্বরে মাইকে দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করে। তারা আমার বাড়ির দিকে মাইক ঘুরে দিয়েছে। আমার বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার খুবই সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা খাজা এনায়েতপুরীর অনুসারী। মাদ্রাসা আমাদের ১০ শতক জমি দখল করে রেখেছে। ওই জমিতে কবরও দিয়েছে।’
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামান বলেন, ‘সাহরিতে ডাকাডাকি ও পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মামলা করেছেন। এ ঘটনায় তদন্তের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’