জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা’র বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট থেকে এসব টাকা আত্মসাৎ করে নিজ গ্রামের বাড়িতে জমি ও পুকুর কিনেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা।
জানা গেছে, রহমানিয়া ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদুল ইসলাম গত ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের সামনে মন্ডল মার্কেটের ২য় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার অধীনে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেন।
সেখানে মাসুদ রানাকে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ করেন। তিনি গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে কৌশলে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজ নামে জমি ও পুকুর কিনেছেন।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা এজেন্ট ব্যাংক হিসাব থেকে নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখিয়ে বার বার গ্রাহকের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার ইচ্ছা মতো অংক বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। ওই হিসাব গুলোতে কারিগরি ত্রুটি আছে জানিয়ে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠাতেন না।
গ্রাহকরা ক্ষুদে বার্তা না আসার কারণ জানতে চাইলে কারিগরি ত্রুটি আছে বলে তিনি জানায়। পরে সে গ্রাহককে ভুয়া হিসাব বিবরণী (স্টেটমেন্ট) বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে তৈরি করে দিতেন।
আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানায়, মাদ্রাসার আয় ব্যায়ের হিসাব করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন এজেন্ট ব্যাংকের হিসাবের সাথে মাদ্রাসার লেনদেনের কোন মিল নেই। পরে জয়পুরহাট ইসলামী ব্যাংকের মূল শাখা থেকে হিসাব
বিবরণী (স্টেমেন্ট) তুললে প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হন।
পরে ওই মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ আক্কেলপুর এজেন্ট ব্যাংকে এসে ব্যালেন্স চেক করলে দেখেন একাউন্টে ৪০ লাখ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র ২৯ হাজার টাকা রয়েছে। এজেন্ট ব্যাংক থেকে আগে যে হিসাব বিবরণী (স্টেমেন্ট) দেওয়া হয়েছিল তাও ভুয়া বলে তিনি জানান।
আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রসার সেক্রেটারী ও বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, এই ব্যাংকে আমাদের মাদ্রসার ৩৯ লাখ টাকা ছিল। রোববার বিকালে আমাদের মাদ্রাসার টাকা এজেন্ট ব্যাংক থেকে তুলতে আসলে দেখি একাউন্টে টাকা নেই। ক্যাশিয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তরও দিতে পারেনি।
টাকা গুলো সে নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করে আত্মসাৎ করেছে বলে স্বীকারও করেন। বালিকা বিদ্যালয়ের নামে একাউন্ট থেকেও ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা।
হাইটেক পৌর কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, আমার ব্যক্তিগত একাউন্টে ৫ লাখ টাকা ছিল। টাকা তুলতে এসে জানতে পারি আমার একাউন্ট থেকেও টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেছে।
অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমি গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন একাউন্ট থেকে কৌশলে টাকা আমার নিজ একাউন্টে নিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে জমি ও পুকুর কিনেছি। মনে করেছিলাম কাউকে না জানিয়ে ধীরে ধীরে টাকা গুলো পরিশোধ করে দেব।
রহমানিয়া ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী ও এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে এমন খবর পেয়ে এসে দেখি গ্রাহকরা ব্যাংকে ভীর করছে। ব্যাংকের যা টাকা আত্মসাৎ করেছে তাকে সেগুলো গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে। আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।
ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যাবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে অভিযুক্ত ক্যাশিয়ারসহ তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আক্কেলপুর শাখার বিভিন্ন গ্রাহকের একাউন্টে থেকে টাকা উত্তোলনের সময় ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে বেআইনি ভাবে ইলেকট্রনিক্স ট্রানজেকশনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ এর তথ্য পাওয়া গেছে।
ক্যাশিয়ার মাসুদ রানার প্রায় এক কোটি টাকা নিজ একাউন্টে ট্রান্সফার করে আত্মসাৎ করার যথেষ্ট সাক্ষী প্রমান রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে অত্র এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম (আঞ্জু), ব্যাংক ইনচার্জ রিওয়ানা ফারজানা সুমি ও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানাকে আটক করে আজ সোমবার জয়পুরহাট বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।