ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ রিমান্ডে মিলন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। মিলনকে হত্যা করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত বলে জানিয়েছে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবিউল ইসলাম।
নবিউল ইসলাম জানান, প্রথমে জানা গেছে অপহরণের তিনদিন পর মিলনকে হত্যা করে ঘাতক চক্রটি। তবে রিমান্ডে উঠে আসে ঘটনার মূল রহস্য। মিলনকে অপহরণ করে হত্যা করা ও লাশ গুম করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাটি ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত।
অপহরণের প্রায় ৬ মাস আগে থেকে মিলন ও তার পরিবারকে নিয়মিত ওয়াচ করেছিল ঘাতক সেজান। ঘটনার আগে হত্যার জন্যে কসটেপ ও মাফলার ক্রয় করা, লাশ নিয়ে যাওয়ার রুট ও বিকল্প রুটসহ লাশ গুম করার পরিকল্পনা তাদের সাজানোই ছিলো।
মামলার লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরও জানান, মিলনকে অপহরণের সাথে সাথেই হত্যা করা হয়। মাফলারের সাহায্যে ২ থেকে ৩ মিনিট গলায় টান মেরে শ্বাস রোধ করে মিলনকে হত্যা করে সেজান ও মুরাদ।
শুধু তাই নয়, হত্যার পরে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উল্লাস করতে করতে ঘুরে বেড়িয়েছে তারা। তবে এ ঘটনায় প্রথমে ৩ লাখের টার্গেট থাকলেও পরে ৩০ লাখ টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে চক্রটি। একটা পর্যায়ে গিয়ে মিলনের পরিবারের সাথে ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সম্মত হয়।
রিমান্ডে আরো জানা যায়। কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাই সেজানের অপহরণকারী চক্রের মূল টার্গেটে ছিল। এ সকল উঠতি বয়সী ছেলেদের ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডেকে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ ও অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতো চক্রটি।
প্রথমে শুধুমাত্র সমকামী যুবকদের জন্যে ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পেতে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করে ছিনতাই ও স্বল্প পরিমাণ অর্থ চাদা বা মুক্তিপণ নিতো সেজান ও মুরাদ। একটা সময় তারা ফেসবুক প্রেমের ফাঁদের চক্রে নারীদের মাধ্যমেও উঠতি বয়সি যুবকদের আকৃষ্ট করতে থাকে।
এভাবেই আস্তে আস্তে এই অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে সেজানরা। শুরুর দিকে প্রতিটি অপহরণের ঘটনায় এক-দুই হাজার টাকা উপার্জন করলেও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে তারা লাখ টাকা লেনদেনে অভ্যস্ত হতে থাকে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, মিলনকে অপহরণের ঘটনায় পাওয়া মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাই সেজানের অপরাধ জীবনের সব চাইতে বড় ছিলো। এর আগে ছোটো বড় প্রায় ১০/১২ টি অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এই সেজান। এ সকল ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মুক্তিপণ হাতিয়ে নিয়েছে সেজানরা।
তবে এর আগে কখনওই ২৫ লাখের মত এতবড় পরিমাণ মুক্তিপণের অর্থ পায়নি বা দাবিও করেনি । এর আগে কখনো অপহরণ করতে গিয়ে কোনো হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটাতে হয়নি।
ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের সূত্রে আরও জানা যায়, মিলনকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঘটনার প্রধান আসামি ঠাকুরগাঁও সদরের মহেশপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সেজান আলী (২৩) ও আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ হোসেন (২৫)।
সেই সাথে ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে ও আসামি মুরাদের ভাগ্নি রত্না আক্তার ইভা (১৯)। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় সহায়তা করার অপরাধে আকচা এলাকার ইলিয়াসের ছেলে মনিরুল হক (১৭)।
এছাড়াও আলামত গুম করতে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে সেজান আলীর মা শিউলি বেগম।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন,` মিলন হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমারা এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। সেই সাথে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি টাকা উদ্ধার কার্যক্রম অব্যহত আছে।,