মহাসড়কে খানাখন্দ সেই পুরোনো বাস্তবতা। নতুন শঙ্কার নাম ‘সড়ক সংস্কার’! এ শঙ্কা এবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের যাত্রীদের দুঃখের কারণ হবে। মহাসড়কের সর্বত্র ভাঙাচোরা। চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীতকরণ কার্যক্রম চলমান থাকায় ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত সারা মহাসড়ক ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী।
মহাসড়কে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যাত্রাকালীন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন সময় লাগছে তিন থেকে চার গুণ বেশি। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সিলেটে পৌঁছাতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেই সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টায়। ঈদের সময়ে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ সময় আরও বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা পরিবহনসংশ্লিষ্টদের। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ঈদযাত্রা ২০ থেকে ২২ ঘণ্টার দীর্ঘ ভোগান্তিতে রূপ নিতে পারে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের এ সমস্যা এবার ভোগাবে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে পর্যটন অঞ্চল সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকদের বিরক্তি ও ভোগান্তির কারণ হবে সিলেট মহাসড়ক। সব মিলে এবার ঈদে সিলেটযাত্রা খুব একটা সুখকর হবে না। বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে অনেকে সিলেট ভ্রমণের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন। তবে যারা নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে চান, তারা না চাইলেও সড়কের এ ভোগান্তি সঙ্গী করেই বাড়ি ফিরতে হবে। তাদের পথে পথে পড়তে হবে ভয়াবহ যানজটে।
পরিবহন সূত্র জানায়, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যেই নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির নির্মাণকাজ, অব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা।
হানিফ পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, ঢাকা থেকে সিলেটে সাধারণ সময়ে যেতে ৫-৬ ঘণ্টা লাগত। এখন সেই সময় তিনগুণ বেড়ে গেছে। ঈদের সময় গাড়ির চাপ বাড়লে ২২ ঘণ্টার কমে গন্তব্যে পৌঁছা কঠিন হবে।
এদিকে শুধু যানজটই নয়, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। সিলেট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, ট্রাফিকব্যবস্থার দুর্বলতার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে, যা যাত্রীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তিনি জানান, যানজট ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে সড়কপথ এড়িয়ে আকাশপথে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। তবে সেখানেও রয়েছে বাড়তি ভাড়ার চাপ।
সিলেটের ট্রাভেলস ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিন জানান, ঈদের সময় যাত্রীদের চাপ বাড়লেও বিমানের ফ্লাইট বাড়ানো হয় না। ফলে ভাড়া বেড়ে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাধারণ সময়ে যেখানে সিলেট-ঢাকা বিমানের ভাড়া ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। এটি এক ধরনের অন্যায়।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খায়রুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ঈদের সময় মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যানজট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজট নিরসনে দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, ট্রাফিকব্যবস্থাপনা জোরদার ও বিকল্প সড়ক ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি আকাশপথের ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।