রংপুরে অপহৃত চার শিশুকে উদ্ধারসহ আদুরী বেগম নামে অপহরণকারী এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত পৌনে ১১টার দিকে রংপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া শিশুরা হলেন-মমিনুল ইসলামের চার বছর বয়সি ছেলে ইসমাইল, মকবুল হোসেনের ছয় বছর বয়সি ছেলে রিফাত, আখিফুল ইসলামের আট বছর বয়সি মেয়ে আঁখি মনি ও মমিনুর ইসলামের ১২ বছর বয়সি সন্তান মিনু।
এ ঘটনায় আটক হওয়া অপহরণকারী আদুরী বেগমকে (৪০) অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আদুরী বেগম কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ফকিরচর গ্রামের মনছুর আলীর স্ত্রী। তিনি রংপুর নগরীর বাবুপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শিশু অপহরণের ঘটনায় হারাগাছ এলাকায় লিটন নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে হারাগাছ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মামলায় আদুরী বেগমকে প্রধান করে আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দিনের বেলা নিজেকে অসহায় বিপদগ্রস্ত দাবি করে আদুরী বেগম নামের ওই নারী নগরীর ৭নং ওয়ার্ডের তপোধন গ্রামে এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় প্রত্যাশা করেন। ওই বাড়ির অভিভাবক আশিকুল ইসলাম ওই নারীকে আশ্রয় দেন। রাতে ওই নারী সেখানে অবস্থান করেন এবং রোজা রাখার কথা বলে সাহরিও খান।
শুক্রবার সারাদিন ওই নারী বাড়িতেই ছিলেন। এরপর চার শিশু নিয়ে ইফতারের পরেই ওই নারী নিখোঁজ হন। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। এরপরে বিষয়টি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে জানানো হলে রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন পুলিশ।
এরপর রাতে ওই চার শিশুদের নিয়ে একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্টেশনে থাকা লোকজনের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই নারীকে মারধরের চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় মকবুল হোসেন নামে এক অভিভাবক জানান, ইফতারের পরে ওই নারী ৪ শিশুকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। বাচ্চাদের না পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানো হয়।
এদিকে রংপুর রেলস্টেশনের সুপার শংকর গাঙ্গুলি বলেন, রাতে ওই শিশুদের নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্টেশনে থাকা লোকজনের সন্দেহ হলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাদের সবাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, শিশু চারজনকে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল।
অন্যদিকে রংপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম বলেন, আমরা ৪ শিশুসহ আদুরী বেগম নামে এক নারীকে আটক করে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসির হেফাজতে হস্তান্তর করেছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ভালো খবর হলো নিষ্পাপ এই বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাতেই সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। এ ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার নারীকে আদালতে পাঠানো হবে। তার সঙ্গে অন্য আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।