ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, আহত ২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তা তৈরি নিয়ে বিরোধের জেরে আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার নাম টিপু মিয়া ওরফে টিপু সুলতান জমদ্দার। 

তিনি জেলার সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত একটি ভয়েস রেকর্ডে টিপু মিয়া বলেন, “এই গ্রুপের যারা আছো বাড়িঘরের ভিতরে তাড়াতাড়ি আমরা বাড়ির সামনে আইয়ো (আসো), আমরা বাড়ির সামনে মুলি (বাঁশের তৈরি দেশীয় অস্ত্র) থইয়া (রেখে) রাখছি।”

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ মার্চ বাসুদেব ইউনিয়নের চান্দি গ্রামে আওয়ামীলীগ নেতা টিপু মিয়া ও লোকমান মিয়ার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ প্রায় অর্ধশত লোক একই গ্রামের মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন ও বাড়িঘরে হামলা চালায়। হামলায় আহতরা জেলার আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লার একটি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গুরুতর আহতরা হলেন-চান্দি গ্রামের মোল্লা বাড়ির কমল মোল্লা ও তার ছেলে আরিফ মোল্লা। চান্দি পূর্বপাড়া তিতাস নদীর পাড়ে গ্রামবাসীদের চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মান করার উদ্দেশ্যে ২১ মার্চ জুম্মার নামাজের পর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সেই সভায় চান্দি গ্রামের হেকিমের বাড়ির সর্দার লোকমান মিয়া ও মোল্লা বাড়ির কমল মোল্লার সাথে বাক বিতন্ডা ঘটে।

ওই ঘটনার জের ধরে ২২ মার্চ বিকালে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুর নেতৃত্বে লোকমান মিয়া দলবল নিয়ে মোল্লা বাড়িতে আক্রমণ করে কমল মোল্লা ও তার পুত্র আরিফ মোল্লাকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় মোল্লা বাড়ির বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে।

আহত কমল মোল্লার স্বজনরা বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতা টিপু মোল্লা বাড়ির লোকজনের ওপর হামলা, মামলা ও হত্যার জন্য প্রকাশ্যে এক কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে।

টিপু মেম্বারের গোষ্ঠীর লোকজন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। তাদের ক্ষমতা ও অর্থের কাছে মোল্লা বাড়ির লোকজন অসহায়।

আওয়ামী লীগ নেতা টিপু ও লোকমানদের অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ আমরা। প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।”

হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চান্দি গ্রামের হেলাল মিয়া বলেন, “মিটিং এ কমল মোল্লার সাথে লোকমান মিয়ার তর্কাতর্কি হওয়ায় হেকিমের বাড়ির লোকমান মিয়া মোল্লা বাড়িতে হামলা করেছে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, “আসরের নামাজ পড়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় বাছির ও লোকমান দলবল নিয়ে মোল্লা বাড়িতে হামলার সময় আমাকেও মারার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমি প্রতিবেশী বাবুলের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়।

ইকবাল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, “হেকিমের বাড়ির এই লোকগুলো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। তারা সব সময় মানুষের উপর হামলা নির্যাতন করে আসছে। আমরা তাদের বিচার চাই।”

হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে গত ২৩ মার্চ আহত কমল মোল্লার ভাই খোকন মোল্লা বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় লোকমান মিয়াসহ ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা টিপু মিয়া কে প্রধান আসামি করে আহত কমল মোল্লার স্ত্রী রানু বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও বাসুদেব ইউপির ১নং ওয়ার্ড মেম্বার টিপু মিয়া বলেন, “কমল মোল্লার গোষ্ঠী ছোট, আমার গোষ্ঠী হইলো বড়। মিটিং এর সভাপতি লোকমান মিয়া আমার গোষ্ঠীর।

মিটিং এ লোকমান মোল্লা ও কমল মোল্লার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। হসপিটালে গিয়ে কমল মোল্লা কে দেখে আসছি, সান্ত্বনা দিছি।

আমি গোষ্ঠীর হতে পারি কিন্তু আমি তো পুরো গ্রামের মেম্বার। যেইটা করছে অন্যায় করছে। যেহেতু আহত হয়েছে, পিছনে কি অন্যায় দেখতে চায় না, চেয়ারম্যান আসুক। বসার পরবর্তীতে যদি অন্যায় হয়ে থাকে যেই বিচার নাই ওই বিচার দিমু। যত টাকা লাগে চিকিৎসা করতে বলেছি।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মোঃ মোজাফফর হোসেন জানান, হামলার অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।