জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের মনে নেই ঈদের আনন্দ। শোকে আর স্মৃতিতে ডুবে আছেন পরিবারের সদস্যরা। আব্দুল্লাহহীন ঈদের আনন্দ শূন্য হয়ে গেছে তাদের জীবন। এমন শূন্যতা যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্টথানার বড় আঁচড়া গ্রামের সেই ছোট্র বাড়িতে।
শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন আব্দুল্লাহ। কলেজে ঈদসহ অন্যান্য ছুটির সময় বাড়িতে ফিরে আসতেন। সারাদিন ভাগ্নি-ভাতিজাদের সাথে আনন্দে দিন কাটতো তার। আব্দুল্লাহর বাড়িতে আসার খবর শুনে ছুটে আসতেন বন্ধুরা। তাদের সাথে দিনভর খেলাধুলা ও গল্প-গুজবে সময় কেটে যেত আব্দুল্লাহর। প্রতি বছরের মত এবারও ঈদ ঘুরে এলেও এবার আব্দুল্লাহর সাথে পরিবারের সদস্যদের ঈদের নামাজ পড়া কিংবা ঈদের দিনে একসাথে খাবার খাওয়া আর হলো না।
আব্দুল্লাহর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাইকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করছি। ভাই বাড়িতে আসতো, আনন্দ-উল্লাসে দিন কাটতো। কিন্তু এবারের দিন আমাদের দুঃখ-বেদনার, কান্নার। ভাইয়ের কবর দেখলেই চোখে পানি চলে আসে। প্রতি বছর রমজানে কলেজ ছুটি হলে ভাই বাসায় চলে আসতো। পরিবারের সকল সদস্য মিলে ইফতার করতাম। ঈদের নামাজের পর বাবা, মেজো ভাইসহ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কান্না ভেঙে পড়ি।
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহসহ চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের যেন আল্লাহ জান্নাত নসিব করেন। যেসব আহত ভাই রয়েছেন তারা যেন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন দেশবাসীর কাছে এই দোয়া কামনা করছি।
আব্দুল্লাহর মেজো ভাই নুর আলম মিঠু বলেন, ঈদের ছুটিতে আব্দুল্লাহ আমাদের একমাত্র বোনের বাসায় যেত। ভাগ্নি, ভাতিজাদের নিয়ে তার ভাল সময় কাটতো। তাদের আদর করতো, ঘুরাফেরা করতো, কেনাকাটা করতো। ঈদের ছুটিতে আব্দুল্লাহ বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতো। কলেজ ছুটি থাকলেও সে লেখাপড়ায় সময় দিতো। কিভাবে লেখাপড়া করছে, আগামীতে কিভাবে করবে এসব নিয়ে বাড়িতে বেশি আলাপ-আলোচনা করতো।
তিনি বলেন, আমাদের সংসারে সব সময় অভাব থাকায় শ্রমিকের কাজ করে বাবাই পড়াশুনার খরচ বহন করতেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে সে চলতে পারতো না। সেজন্য সে কলেজের আশপাশে টিউশনি করতো। টিউশনির টাকা কিছু বাঁচিয়ে ভাগ্নি-ভাতিজাদের ঈদের উপহার হিসেবে কাপড় কিনে আনতো।
শহীদ আব্দুল্লাহর মা মাবিয়া খাতুন বলেন, আব্দুল্লাহ ঈদের সময় গরুর মাংস ও খিচুড়ি খেতে পছন্দ করতো। আমার হাতের রান্না তার অত্যন্ত পছন্দের ছিল। আজ আমার বুকের ধন নেই। একজন মা বোঝে তার সন্তান হারানোর কষ্ট।
আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, আব্দুল্লাহর জন্য কবরের পাশে শুধু কাঁদি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি। এখন সবাই আমার খোঁজ-খবর রাখে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আরও যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের জন্য দোয়া করবেন। আমার ছেলে জীবন দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনেছে। একজন বাবার জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট বংশাল থানার পাশে তাঁতী বাজার এলাকায় দুপুর ২টার দিকে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আব্দুল্লাহ। গুলি তার মাথায় লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ঢাকার সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিন মাস ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভোরে মারা যায়। তিনি পুরোনো ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :