নওগাঁর পত্নীতলার কৃষক দুই ভাই হেলাল হোসেন ও বেলাল হোসেন। উপজেলার কৃষ্ণবল্লভ মৌজার চকমোমিনপুর মাঠে ১২২ শতক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে ভালোই চলছিল জীবন জীবিকা। এবারও করেছিল আবাদ। আর একমাস পর স্বপ্ন বুনেছিল ধানগুলো ঘরে তুলবে।
সারা বছর চলবে তাদের সংসার। কিন্তু সেই আশায় গুরে বালি। মাঠে এসে দেখেন ধানগুলো মরে আছে। দূর্বৃত্তরা আঁধারে লাগানো ধানে কীটনাশক বিষ (বিন্যা মারা) স্প্রে করে নষ্ট করে দিয়েছে। আর তাতেই মাথায় হাত কৃষক দুই ভাইয়ের।
অভিযোগ প্রতিপক্ষরা শত্রুতামূলক গত বৃহস্পতিবার ৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সকলের অজান্তে তাদের সেই জমিগুলোতে (বিন্যা মারার ওষুধ) কীটনাশক বিষ স্প্রে করে ধানগুলো নষ্ট করে দিয়েছে।
এ ঘটনায় চকমোমিনপুর এলাকার গছির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে বেলাল হোসেন বাদি হয়ে চকনিরখিন এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ, কৃষ্ণবল্লভ এলাকার মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন ও তাই ভাই ফরিদ হোসেন এবং বরইল এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে রুয়েল হোসেনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ভূক্তভোগী কৃষক দুই ভাই হেলাল ও বেলালের সাথে। তারা অভিযোগের সুরে বলেন, এই জমিগুলো চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। আমাদের দাদার আমল থেকে চাষ করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে বিবাদীরা তাদের জমি বলে দাবি করে ধান কাটতে হুমকি দেয়।
তবে ধান কাটার হুমকি দিলেও তারা যে এভাবে বিষ স্প্রে করে ধানগুলো নষ্ট করে দিবে সেটা কল্পনা করিনি। ধারদেনার মাধ্যমে ফসল চাষ করেছিলাম। এখন আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেল। থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি সুষ্ঠু বিচার পাবো।
সেখানে কথা হয় প্রতিবেশী কৃষক জমিনের সাথে। তিনি বলেন, সকালে শুনতে পেয়েছি জমিতে কারা যেন বিষ দিয়েছে। এখন এসে দেখি এই অবস্থা। শুনছি এই জমি নিয়ে নাকি ক্যাচাল শুরু হয়েছে। তবে এভাবে বিষ দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া ঠিক হয়নি।
আরেক কৃষক রবিউল বলেন, আমি ছোট থেকে দেখে আসছি এই জমিগুলো বেলালেরা চাষ করছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বিষ দিয়ে ধানগুলো মেরে ফেলল তা বলতে পারছিনা। এভাবে মেরে ফেলা ঠিক হয়নি। তাদের প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেশী মেহেদী হাসান বলেন, ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে বিষ দিয়ে ধান নষ্ট করবে এটা কেমন কথা। শুনছি বেলাল অভিযোগ দিয়েছে। আমার ধারণা তারা এবার একশ মণ ধান পাইতো। এখন দশ টাকার ধানও পাবেনা। আশা করছি বেলাল ক্ষতিপূরণসহ বিচার পাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ বলেন, ওই জমিটি আমার ক্রয়কৃত। আমিই ধান লাগিয়েছিলাম। হেলাল ও বেলালসহ আর কয়েকজন বিষ প্রয়োগ করে ধানগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। এখন উল্টো আমার দোষ দিচ্ছে। আমিও তাদের নামে মামলা করবো। আপনি চাইলে আমার জমির কাগজ দেখতে পারেন।
এদিকে তিনি তার স্বপক্ষে জমির কাগজ দেখাতে চেয়েছিলেন এই প্রতিবেদককে। এই জন্য গত দুই দিন থেকে ঘুরানোর পর মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল আবারও তালবাহানা করে কাগজ দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। মহুরির দোয়ায় দিয়ে জানিয়ে দিলেন কাগজ দেখানোর দরকার নেই। যেভাবে পারে নিউজ করুক।
জানতে চাইলে পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু তালেব বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্র দুজন অফিসারকে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। এখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।