দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কিছুটা কম হলেও বন্দর ঘিরে রয়েছে শঙ্কা। একইসঙ্গে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে জলাশয় ভরাট করে নির্মিত ভবনগুলো।
২০১১ সালের জরিপ অনুসারে, নগরীতে ভবন আছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে, এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আড়াই লাখের বেশি।
গত ৩ এপ্রিল মিয়ানমারের মান্দালয়ে ৭.৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার। একই স্থানে ১৯৩২ সালের ৭ মাত্রা এবং ১৯৪৬ সালে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। একই বেল্টে ১০০ থেকে ১৫০ বছর পর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সে বিবেচনায় মিয়ানমারে ভূমিকম্পের মাধ্যমে সঞ্চিত শক্তি বেরিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলে খুব শিগগিরই বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা কম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আনসারী বলেন, ‘চিটাগং বেল্টে ৭.৬২ মাত্রা হিট করতে পারে কিন্তু সেটা আড়াইশ বছর পর হবে। বাট ওটা হচ্ছে রাম্বিয়া আইল্যান্ডে, এটা যেহেতু ৮.৫ সেহেতু এটা মেজর একটা নাড়া দিয়ে যাবে। তবে এটা ছাড়া চট্টগ্রামে ১৫০ বছরে সাইগ্রাং বেল্টে হওয়ার আশঙ্কা নেই। সাইগ্রাং বেল্টে ১৯১২ সালে হিট করেছিল। একই জায়গায় ৭.৯ মাত্রা। ওইটা চট্টগ্রামে আঘাত করেনি। জারণ এনার্জি ওইদিকে চলে গিয়েছিল। তবে বাকি চারটা সোর্স ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ৮ বা ৮ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তার মতে, পার্বত্য এলাকা ও মাটির গঠন শক্ত হওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে বড় ধসের আশঙ্কা কম। তবে ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম বন্দর এবং নগরীর জলাশয় ভরাট করে নির্মিত অসংখ্য ভবন।
অধ্যাপক আনসারী বলেন, চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা। কিছু জায়গায় ডোবা-নালা খাল আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা দুর্বল। কিন্তু সেখানে বাসা নেই। বন্দরের পাশে এয়ারপোর্ট। সে জন্য রিভিউ দরকার। অন্য জায়গায় মাটি শক্ত। আর নতুনভাবে ডোবা-নালার ওপর যে সমস্ত ভবন হচ্ছে সেগুলো ঝুঁকিতে আছে।
চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে সাম্প্রতিক কোনো জরিপ নেই। তবে যেকোনো ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সিডিএকে কঠোর তদারকির আহ্বান জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা গণপূর্ত বিভাগ আছে। এটার অধীনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে। তারা ভবনগুলো কোড মানা হলো কি না তা দেখাশোনা করে। আমরা তাদের অনুরোধ করব আরও যাতে নিবিড় মনিটরিং করে। যাতে মানুষ এটাকে অগ্রাহ্য করতে না পারে। একটা নিরাপদ নগর আমাদের সবার কাম্য। কারণ ভূমিকম্প এমন একটা জিনিস এখান থেকে সরে যাওয়ার উপায় থাকে না।’
১৯৯৬ সালে ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকায় ভবন ধসে পড়ে। সেই সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।