দেশজুড়ে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অনেকেই বাবা-মাকে সাথে নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলেও ব্যতিক্রম ছিল রিমার গল্পটা। বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একদিকে বাবার মরদেহ অপরদিকে এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু জীবনের লক্ষ্য পূরণের স্বপ্নকে সত্যি করতে ব্যথা বুকে নিয়েই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ওই এসএসসি পরীক্ষার্থী। কারণ বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় সরকারি অফিসার হবে।
হ্নদয় বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের পশ্চিম তিলকপাড়া গ্রামে। এসএসসি পরীক্ষার্থী নাম মোছা. রিমা আক্তার। তিনি উপজেলার তালিমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার একজন ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনে শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ২২ নং কক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।
জানা গেছে, উপজেলার ৮ নং চেংমারী ইউনিয়নের পশ্চিম তিলকপাড়া গ্রামের কৃষক মতলেব মিয়া গত বুধবার রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। কিন্তু খুব দ্রতই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মাঝপথ থেকেই বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ।
মুহুর্তেই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত মতলেব মিয়ার তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে বড়মেয়ে মিতা ও মেঝ মেয়ে রেশমা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন। আর সবার ছোট মেয়ে রিমা আক্তার এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে এখন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছেন রিমা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মেয়ে যখন পরীক্ষার হলে তখন বাবার দাফন সম্পন্ন হয়।
এসএসসি পরীক্ষার্থী রিমা আক্তার জানান, আমর বাবার স্বপ্ন ছিল আমি সরকারি বড় অফিসার হবো। কিন্তু হঠাৎ করেই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকতা ছিলনা। কিন্তু বাবার স্বপ্নের কথা মনে হলে অনেক কষ্ট করে পরীক্ষার অংশগ্রহণ করেছি। আল্লাহর রহমতে পরীক্ষা ভালো হয়েছে। সবাই বাবা এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, রিমা ছোট মেয়ে সবার আদরের। বিশেষ করে তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল রিমাকে নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ তার মৃত্যু হলো। এখন মেয়েটার যে কি হবে? অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়লো মেয়েটা।
তালিমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তসলিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। খবর পাওয়ার সাথে সাথে রাতেই তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থী রিমাকে রিমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছি। আজ সকালে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে সার্বিকভাবে ছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিক্ষা কমিটির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, ওই শিক্ষার্থী যাতে সবগুলো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল করতে পারে, আমরা খোঁজখবর রাখবো।