নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাটি খুড়ে একই পরিবারের দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ওই পরিবারের এক পুরুষ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন-সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়ার প্রয়াত আব্দুস ছামাদের কন্যা পোশাককর্মী লামিয়া আক্তার (২২), লামিয়ার ছেলে রাফসান লাবিব (৩) ও বড়বোন স্বপ্না আক্তার (৩৫)।
শুক্রবার দুপুরে দিকে মিজমিজি পশ্চিমপাড়া পুকুরপাড় এলাকায় বাসার সামনের রাস্তার পাশে মাটিচাপা অবস্থায় মরদেহগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ এই ঘটনায় লামিয়ার স্বামী পাশের দক্ষিণপাড়া এলাকার মো. মোহসীনের ছেলে মো. ইয়াসিনকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান।
“পশ্চিমপাড়া এলাকায় ভাড়াবাসায় থাকতেন নিহত ব্যক্তিরা। গত মাসের শেষদিকে এই বাসায় ওঠেন তারা। বাসার সামনের রাস্তার পাশে ময়লার স্তুপে একটি হাত দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।”
লামিয়া ও তার বড়বোন স্বপ্নার দেহের হাত, পা ও মাথা খন্ডিত অবস্থায় বস্তাবন্দি ছিল। আর শিশুটির অখন্ডিত মরদেহ পাওয়া গেছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
নিহত লামিয়ার মেজো বোন মুনমুন পাশের এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
তিনি বলেন, গত সোমবার দুপুরে লামিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন মুনমুন। এরপর থেকে লামিয়ার মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল। তবে, ব্যস্ততার কারণে তিনি আর খোঁজ নিতে পারেননি।
“২০২২ সালে প্রেমের সম্পর্কের পর ইয়াসিনকে বিয়ে করে লামিয়া। ইয়াসিন মাদকাসক্ত। কোনো কাজ কাম করতো না। তার বাবায় একটা অটোরিকশা কিনে দিলেও ঠিকমতো সেটাও চালাইতো না। কাজ কাম না করায় প্রায়ই বোনের কাছে টাকা চাইয়া ঝগড়া করতো। টাকা না দিলে মারধরও করতো।
ওছাড়া এই খুন করার কোনো কারণ আর কারও নাই”, বলেন লামিয়ার মেজোবোন।
সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন লামিয়া। বড়বোন স্বপ্না মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়াতে তিনি বাসাতে লামিয়ার সন্তানকে দেখাশোনা করতেন বলে জানান মুনমুন।
তবে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কোনো কিছু স্বীকার করেনি জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হাসিনুজ্জামান বলেন, “নিহতদের পরিচয় শনাক্তের পরই পাশের এলাকার একটি কলাবাগান থেকে ইয়াসিনকে আটক করে পুলিশ। আটকের সময়ও সে নেশাগ্রস্ত ছিল।”
হত্যাকাণ্ডটি অন্তত চারদিন আগে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছে পুলিশ। তবে, নিহতরা যে বাসায় থাকতেন সেখানে প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান হাসিনুজ্জামান।
তবে,সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :