সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

১২ সন্তানের জননী বেঁচে থাকতেই খাওয়ালেন নিজের চল্লিশা

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম

১২ সন্তানের জননী বেঁচে থাকতেই খাওয়ালেন নিজের চল্লিশা

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

মৃত্যুর পর চল্লিশা হবে কি না, সন্তানরা পারবে কি না—এই ভেবে আর বসে থাকেননি বানেছা বেওয়া। জীবিত থাকতে নিজেই আয়োজন করে ফেললেন নিজের চল্লিশা। 
বানেছার বয়স এখন ৯৬। রাজশাহীর খড়খড়ি বাইপাস কমলাপুর গ্রামের প্রয়াত ইনছার আলীর স্ত্রী তিনি। এমন ঘটনায় এলাকার মানুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বানেছা বেওয়া।  
পেট ভরে খেয়ে তার জন্য দোয়া করেন সবাই।

গত বৃহস্পতিবার নিজ গ্রামে এই আয়োজন করেন। সাজানো হয় বিশাল প্যান্ডেল। নীল-সাদা সামিয়ানা, গরু-ছাগল জবাই, আর দেড় হাজার মানুষের জন্য রান্না করা হয় । আশপাশের গ্রাম, এমনকি দূরের মানুষও ছুটে আসেন এই ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হতে। 
চল্লিশার খাবার খেয়ে সবাই তার জন্য দোয়া করেন। বানেছা বেওয়া সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেন। 

১২ সন্তানের মা বানেছা বেওয়া। এ আয়োজনে বানেছার ৮ ছেলে, ৪ মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ প্রায় ৬০ জন পরিবারের সদস্য একত্রিত হন। সবাই দোয়া করেন বানেছার জন্য।

বানেছা বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও মনটা আজও টগবগে। ঘুরে ঘুরে সবার খাওয়া দেখেছেন। বানেছা বলেন— ‍‍`মরার পরে যদি কেউ চল্লিশা না করে, তাই আগেই করলাম, তাতে সবাইকে খাওয়ানোও হলো, দোয়াও পেলাম।‍‍`

‍‍`এখন মনে শান্তি লাগছে। মরার পরে না, বেঁচে থাকতেই মানুষের দোয়া পাওয়া যে কত সুন্দর!- হাসিমুখে বলছিলেন বানেছা বেওয়া। 
খাওয়া দাওয়া শেষে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মোনাজাত।

মোনাজাতে বানেছার সুস্থতা কামনা, পরিবারের সদস্যদের একত্রে মিলবন্ধনে একে অপরের সাথে সুস্থতার শহীদ থাকার জন্য দোয়া করা হয়।
বানেছার বড় ছেলে জান মোহাম্মদ জানান, আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আমার মা ৯৫ বছর বয়সেও এখনো তিনি সুস্থ সবল ভাবে চলাফেরা করছেন। 

মায়ের এমন ইচ্ছা শুনে আমরা ভাই বোন এমন উদ্যোগ নিয়ে মায়ের ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসি।

বড় ছেলে আরও বলেন ১৩শ মানুষের এমন আয়োজনে আমরা মায়ের মুখে হাসি খুশি দেখতে পেয়েছি এতে আমাদের গর্বে বুকটা ভরে গেছে।

এলাকার একজন মুরুব্বী জহির উদ্দিন বলেন, খাওয়া-দাওয়াটা বড় কথা নয় এমন এক দৃষ্টান্ত আমাদের মনে বড় সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলেছে, যা আমার এই বয়সেও মনে থাকবে।

বানেছার নাতি বলেন, এখনকার সময়ে অনেকেই মা-বাবাকে কেউ দেখভাল করতে চাই না তবে আমার বাবারা যে তার মাকে ভুলে যাননি এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গোটা এলাকার মানুষের মনে যে স্থান করে নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আরবি/আবু

Link copied!