পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার পশ্চিম পশারীবুনিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান নান্না শিকদার মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও গেজেটভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, মুক্তিযুদ্ধকালীন লুটপাট এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় মিরাজ শিকদার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে দায়ের করা এক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, হাবিবুর রহমান নান্না শিকদার (মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং: ০৬০৫০৫০৬৪) প্রকৃতপক্ষে একজন রাজাকার। সাব-সেক্টর কমান্ডার (সেক্টর-৯) মেজর জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ ২০০২ সালের ২ আগস্ট এক প্রত্যয়নপত্রে জানান, নান্না শিকদার মুক্তিযোদ্ধা নন, বরং রাজাকার হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালে রাজবিহারী ডাক্তার বাড়ি থেকে ৬৫ হাজার টাকা ও ৪০ ভরি স্বর্ণ লুট করেন নান্না শিকদার। এ বিষয়ে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল বাবুল হালদার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি দরখাস্ত দাখিল করেন।
২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি ভান্ডারিয়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজাকারদের একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করেন। তালিকার ৬০ নম্বরে ‘নান্না, পিতা-আজহার আলী’ নাম পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে রাজবিহারী ডাক্তার বাড়িতে ৭ জনকে হত্যা করে রাজাকাররা। এ ঘটনায় ১৯৭২ সালের ২ এপ্রিল ভান্ডারিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয় (মামলা নং-১)। মামলায় ১৯ জন আসামির মধ্যে নান্নার বড় ভাই মানিক শিকদার ছিলেন ১০ নম্বরে। মামলাটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
জমি সংক্রান্ত অভিযোগেও রয়েছে বিস্তর অনিয়ম। অভিযোগে বলা হয়, পৈত্রিক সূত্রে আজহার আলীর (নান্নার পিতা) প্রাপ্ত জমি ছিল ১৩ কাঠা। অথচ বর্তমানে নান্নার জমির পরিমাণ প্রায় ৮০০ কাঠা, যা অবৈধভাবে অর্জিত বলে দাবি করা হয়েছে।
ভান্ডারিয়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বাচ্চু বলেন, ‘নান্না শিকদার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন—এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। বরং তার বাবা এলাকায় স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন এবং জেলও খেটেছেন। এমন একজন ব্যক্তির সন্তান কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও জানান, ‘নান্না দাবি করেছিলেন তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। তবে কেবল ভারতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রমাণ নয়। অনেকেই লুটপাট করে ভারতে পালিয়েছিলেন।’
অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান নান্না শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে আমাকে রাজাকার বানানোর চেষ্টা চলছে।’ তবে অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়গুলো এড়িয়ে যান এবং বলেন, ‘সবই ষড়যন্ত্র।’
স্থানীয়রা ও অভিযোগকারী মিরাজ শিকদার হাবিবুর রহমান নান্না শিকদারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলসহ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :