দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ইউনিয়নের সতীঘর গ্রামের শাহ্ রুম্মানুল হকের বসতভিটা দখলের চেষ্টা করছেন নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ।
ইতোমধ্যে তিনি ৪৫ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। বসতভিটা দখলের উদ্দেশে পুরাতন সীমানা দেয়াল ভাঙারও চেষ্টা করেছেন। বাড়িতে হামলা করে সবাইকে আহত করে সম্পদ ও ভূমির দলিলপত্র লুট করেছেন। এ ঘটনায় মামলা বিচারাধীন।
দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ইউনিয়নের সতীঘর গ্রামের শাহ্ রুম্মানুল হক শনিবার (১২ এপ্রিল) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে শাহ্ রুম্মানুল হক জানান, মো. আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ তার উত্তরের বাড়ির বাসিন্দা। রাশেদের নির্দেশে তার লোকজন রুম্মানুল হকের ৪৫ শতাংশ ফসলি জমি দখল করে নিয়েছে। বসতভিটা দখলের উদ্দেশে সীমানা দেওয়াল ভাঙারও চেষ্টা করেছে।
এ ঘটনায় তিনি ২০২১ সালের ২৫ মার্চ মো. আব্দুল ওয়াহাব রাশেদসহ ৮ জনকে বিবাদী করে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত সদর, সিলেটে স্বত্ব মোকদ্দমা ১৭৭৪/২১ দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি (স্বত্ব মোকদ্দমা- ১৫৬/২২) সহকারী জজ আদালত ফেঞ্চুগঞ্জে বিচারাধীন।
শাহ রুম্মানুল হকের অভিযোগ, গত ৮ মার্চ আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ ও আব্দুল ওয়াদুদ শাহেদের নির্দেশে তার চাচাতো ভাই মো. আবুল কাশেম নাহিদ, হারুন মিয়া, ভাতিজা মারুফ আহমদ, মুমিন মিয়া, আল-আমিন, মারওয়ান আহমদ, চাচাতো বোন বাবনা বেগম, লিপি বেগম এবং চাচাতো ভাইয়ের বউ মাছুমা বেগম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বসতঘরে আক্রমণ করে এবং
রুম্মানুল হক ও তার স্ত্রী এবং বয়স্ক মাকে মারধর করে নগদ ১ লাখ লাখ টাকা, ৬ ভরি স্বর্ণালংকার, দুটি মোবাইল ফোন, এসএ ও বিএস মূল নক্শাসহ দলিলপত্র লুট করে এবং স্বত্ব মোকদ্দমা তুলে সমুদয় জায়গা-জমি তাদের দখলে না দিলে এবং এ বিষয়ে কোনো মামলা করলে বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং সবাইকে টুকরো টুকরো করার হুমকি দিয়ে যায়।
৯৯৯-এ ফোন করলে মোগলাবাজার থানা পুলিশ এসে আহত সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ৯ মার্চ অপরাধীরা রুম্মানুল হকের সুপারি বাগানে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।
মোগলাবাজার থানায় মামলা করতে গেলেও মো. আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ তার প্রসাশনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলা দায়েরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। ফলে ওসি মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় ১৩ মার্চ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে (মোগলাবাজার সি. আর মামলা নং ৩২/২০২৫) মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ এ ঘটনায় সাক্ষ্য না দিতে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।
আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ ও আব্দুল ওয়াদুদ শাহেদের নির্দেশে তাদের লোকজন বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন জানিয়ে রুম্মানুল হক জানান, তাদের কয়েকটি হয়রানিমূলক মামলা ইতোমধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রম্নম্মানুল হক বলেন, চলাচলের রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ারও চেষ্টা করছেন আব্দুল ওয়াহাব ও তার লোকজন। তাদের মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে ও নিজেদের জায়গা জমি রক্ষার জন্য আমার বড় ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ্ এনামুল হক যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে দুটি আবেদন করেন।
২০২৪ সালে বড় ভাই শাহ্ এনামুল হক দেশে এসে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু মো. আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ এই অভিযোগের তদন্ত আটকে দেন।
মো. আব্দুল ওয়াহাব রাশেদ নিজেকে সচিব হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি কর্মস্থল নরসিংদী থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি গাড়ি নিয়ে মাসে ২-৩ বার বাড়িতে আসেন বলেও অভিযোগ করেন রুম্মানুল হক। তিনি আতশবাজি ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও সরকারি গাড়ি সাথে থাকায় সাধারণ জনগণ ভয়ে প্রতিবাদ করেন না।
এলাকার নিরীহ লোকজনের জমিও তার দখলে আছে বলেও জানিয়েছেন রুম্মানুল হক। মোগলাবাজার স্টেশন এলাকার উভয় পাশের কৃষি জমি দখল করে নিজ জমির সাথে একত্র করেছেন তিনি। এ ছাড়া ভুল তথ্য দিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে তার বাড়ির রাস্তা পাকাকরণ করেছেন।
আব্দুল ওয়াহাব রাশেদের দুর্নীতি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এলাকার অধিবাসী কবিরুল ইসলাম খছরু, আব্দুল মতিন, জুনেদ আহমদ, আসদ্দর আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।