এবারের বাংলা নববর্ষেও পঞ্চগড় সীমান্তে বসছে না দুই বাংলার সেই আবেগঘন কাঁটাতারের মিলনমেলা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও উভয় দেশের প্রশাসনের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এই ভিন্নধর্মী আয়োজন বন্ধ থাকছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।
শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত এলাকায় এই মিলনমেলা না হওয়ায় সাধারণ মানুষকে সীমান্তে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে পঞ্চগড় জেলার অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর সীমান্তের প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটারজুড়ে কাঁটাতারের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আত্মীয়স্বজনরা দেখা-সাক্ষাৎ ও কথোপকথন করতেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এ আয়োজন হলেও ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন কারণ, বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এই মিলনমেলা বন্ধ রয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘সীমান্তের কাঁটাতারের মিলনমেলা আয়োজনের বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাই এ বছরও এ আয়োজন হচ্ছে না।’
বিজিবি ১৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নববর্ষ আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। বিগত দিনে দেখা গেছে, অনেকেই সীমান্তে এসে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতেন। তবে সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলার কথা বিবেচনায় রেখে বর্তমানে এ ধরনের আয়োজন বন্ধ রয়েছে। যারা না জেনে সীমান্তে চলে আসেন, তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।,
স্থানীয়রা জানান, দেশ ভাগের পর বহু পরিবার সীমান্তের দুই প্রান্তে অবস্থান করায় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার একমাত্র সুযোগ হয়ে উঠেছিল এই মিলনমেলা। কাঁটাতারের দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাত না ছুঁয়ে হলেও চোখে চোখ রেখে কথা বলার মধ্য দিয়ে আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হতো। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে হাসি—সব মিলিয়ে সীমান্তে গড়ে উঠতো এক অন্যরকম আবহ।
তবে সীমান্ত আইন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষ এবছরও এ আয়োজন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে সীমান্তে কাঁটাতারের কাছে দেখা যাবে না সেই পরিচিত দৃশ্য—যেখানে নাড়ির টানে মানুষ ছুটে আসে প্রিয়জনদের দেখতে।
আপনার মতামত লিখুন :