কুমিল্লা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয় ৩৪ হাজার টাকার ইনজেকশন। তবে পরে বোতলের লেবেল খুলে দেখা যায়, ভেতরে ছিল মাত্র ৪০০ টাকার একটি সাধারণ ওষুধ। ঘটনাটি ঘটে ‘মুন স্পেশালাইজড হসপিটাল’-এ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা ঘিরে জেলায় চলছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়।
ভুক্তভোগী রোগীর মেয়ে ফারজানা আক্তার বিথী জানান, তিনি গত ছয় মাস ধরে তার মাকে চিকিৎসক ডা. মো. আশরাফ উল মতিন (সাগর)-এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
গত শনিবার (৫ এপ্রিল) তার মাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, রোগীর হাড় খুবই দুর্বল হয়ে গেছে এবং তা অস্টিওপরোসিস পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ অবস্থায় চিকিৎসক রোগীর জন্য Aclasta 5mg নামের একটি ইনজেকশন প্রেসক্রাইব করেন, যার দাম তিনি বাজারে প্রায় ৩৮ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেন। তবে চিকিৎসকের সহকারী বিজয় সরকার জানান, তিনি ইনজেকশনটি ৩৪ হাজার ৫০০ টাকায় সরবরাহ করবেন। চিকিৎসক তার সহকারীর মোবাইল নম্বর প্রেসক্রিপশনের পেছনে লিখে দেন এবং তার মাধ্যমেই ইনজেকশন প্রয়োগের পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার পর সহকারী বিজয় সরকার ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। তবে তিনি ইনজেকশনের আসল বোতল না দেখিয়ে শুধু মোড়ক দেখিয়ে বলেন, ‘এটাই প্যাকেট, ছবি তুলে রাখুন। ইনজেকশন দিয়ে ফেলি, আমার তাড়া আছে।’
ইনজেকশন প্রয়োগের পর ফারজানা আক্তার বিথী ইনজেকশনের বোতল চাইলে দেখতে পান সেটি Aclasta নয়, বরং একটি ভিন্ন ইনজেকশন, যার বাজারমূল্য মাত্র ৪০০ টাকা। তখনই তারা বোতলটি জোর করে নিয়ে নেন এবং পুরো প্রক্রিয়া মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন।
পরবর্তীতে ডা. আশরাফ উল মতিন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে না নিয়ে বলেন, ‘ওষুধ একই, শুধু নামের পার্থক্য।’ কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি, ওষুধের গায়ে নতুন স্টিকার লাগিয়ে ভুয়া ওষুধ চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে ডা. আশরাফ উল মতিন বলেন, ঘটনার সময় আমি চেম্বারে ছিলাম না। এটি আমার সহকারী নিজেই করেছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আব্দুল বাকি আনিসকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মো. বশির আহমেদ বলেন, আমার কাছে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।