ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী আব্বাস উদ্দিন ১৫ বছর একই কর্মস্থলে থেকে তার গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল আলিশান বাড়ি এবং নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি। তার আলিশান বাড়ি ও অঢেল সম্পত্তির নেপথ্যে রয়েছে অনিময় ও দুর্নীতির মহাযজ্ঞ।
জানা যায়, উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী আব্বাস উদ্দীন আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামের আবদুল খালেক মাস্টারের ছেলে। তার ভাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমানের ছত্রছায়ায় তিনি অফিস সহকারী পদে এই চাকরি ভাগিয়ে নেন এবং চাকরির শুরু থেকেই তিনি নিজ উপজেলা চরফ্যাশনে কর্মরত থেকে স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়েছেন।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী পদে চাকরি নেওয়ার পর থেকে নদীতে বিভিন্ন মৎস্য অভিযানের সময় উপজেলার প্রতিটি মাছঘাটের জেলেদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেন। পাশাপাশি জেলে পুনর্বাসনের নামে জেলেদের হয়রানি ও অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ মৎস্য অভিযান চলাকালীন জেলেদের কাছ থেকে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও আঁতাত করে জেলেদের বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। তার স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্থানীয় জেলে, রাজনৈতিক নেতা এবং অফিসের কর্মকর্তাদেরও তাকে ম্যানেজ করেই চলতে হয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে আব্বাস উদ্দিন নদী থেকে ঘাট ও অফিস পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে সবাইকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন মাছঘাটের জেলেরা জানান, চরফ্যাশন মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী আব্বাস উদ্দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানসহ বিভিন্ন অভিযানের আগে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে জেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া নদীতে কোনো অভিযান পরিচালনা করার আগেই জেলেদের ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেন এই অফিস সহকারী আব্বাস।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি ভয়ভিতি দেখিয়ে জেলেদের কাছ থেকে বড় সাইজের মাছ নিয়ে আসেন। জেলেদের জাল, মেশিন, বকনা বাছুর ও জেলে পুনর্বাসনের তালিকায় নাম যুক্ত করার লোভ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন আব্বাস উদ্দিন।
গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালীন সামরাজ মাছঘাট, কচ্চপিয়া, নতুন স্লুইস, বকশি, বাংলাবাজার, গাছির খাল, কাশেম মিয়ার বাজার, ভাড়ানি বাজার ও চৌকিদার খাল বাজার মাছঘাট এলাকার জেলেরা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করছেন।
নুরাবাদ ওয়ার্ডের জেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে আমরা গাছির খাল এলাকার ৬৫টি জেলে নৌকা এই নিষেধাজ্ঞার সময় তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরি। মৎস্য বিভাগের লোকজন অভিযানে নামলে আমরা খবর পেয়ে যাই।’
কীভাবে জানতে পারেন প্রশ্নের জবাবে এই জেলে জানান, ‘মৎস্য অফিসে আমাদের পুরোনো লোক রয়েছে। তিনি আমাদের নদীতে অভিযানে নামার আগেভাগে ফোন করে জানান।’
তিনি আরও বলেছেন, প্রতিটি ঘাট এলাকায় জেলেরা ধার্যকৃত চাঁদা দিয়ে অফিসকে ম্যানেজ করেই অবরোধের মধ্যে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করেন।
অভিযোগ প্রসেঙ্গ জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দিন ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কল কেটে দেন এবং পরে আর ফোনকল রিসিভ করেননি।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেছেন, আব্বাস উদ্দিন দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশী সময় ওই কর্মস্থলে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে নানান অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং শিগগিরই তার বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।