ঘূর্ণিঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৩৬০ বিঘা পেঁয়াজবীজের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এ ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। এতে দুই শতাধিক কৃষকের ৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া পরিষ্কার না হলে এ ক্ষতি বাড়ার আশঙ্কা করছেন পেঁয়াজবীজের চাষিরা।
উপজেলার চাড়োল গ্রামের বাবলুর রহমান ও ইউপি সদস্য সুলতান আলীর ১০ বিঘা জমির পেঁয়াজবীজ শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাবলুর রহমান জানান, অন্য এলাকাগুলোতে বৃষ্টি হলেও শিলাবৃষ্টি হয়েছে চাড়োল ও পতিলাভাষা গ্রামে। এই গ্রামে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজবীজ চাষাবাদ হয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মধ্য চাড়োল ও পাতিলাভাষা গ্রামের পূর্বাংশে নিচু জমিগুলোতে পানি জমেছে। শিলাবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের ফুলগুলো ডাঁটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। এসব ফুল তুলে নিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা।
৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পেঁয়াজবীজ চাষ করেছিলেন মধ্য চাড়োল গ্রামের রাজিউর রহমান রাজু। তিনি বলেন, ‘৩০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে পুরো স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আশায় বুক বেঁধেছিলাম, পেঁয়াজবীজ বিক্রি করে মেয়েকে বিয়ে দেব। এখন ঋণ পরিশোধ কীভাবে করব, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে।’
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজ ক্ষেত লাগানোর পর থেকে পরিচর্যা-সবই শেষ। ১০ দিন পর থেকে ফসল কেটে ঘরে তোলা শুরু করতেন তারা। ৬০ শতাংশ বীজ পেকেছে, অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ কাটা শুরু থেকে ঘরে তোলার সময় পেকে যেত। ১০ দিনের ব্যবধানে কৃষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
পতিলাভাষা গ্রামের আসাদুর রহমান বলেন, ‘দুই ভাই মিলে ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করেছিলাম। মনে করেছিলাম, ৯০০ কেজি বীজ পাব। ঝড় আর শিলাবৃষ্টির কারণে অর্ধেক ফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা।’
আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছিল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে। রাতের বেলা বাতাস থাকলেও সকালের পর থেকে নেই। বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় গাছ ও বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ১টা ৫০ মিনিটে দমকা হাওয়ার পরে বৃষ্টি নামা শুরু করে। এরপরে শিলাবৃষ্টি পড়ার কারণে পেঁয়াজবীজের ফুলের ডাঁটা ভেঙে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নিচু জমির ক্ষেতে পানি জমে গেছে। বৃষ্টি পড়া বন্ধ না হলে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ‘জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকসহ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। ৫০ হেক্টর পেঁয়াজ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও মাঠে আছেন আমাদের কর্মকর্তারা।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। বিশেষ করে পেঁয়াজের বীজচাষিদের পরিপক্ব বীজগুলো ঘরে তুলে নিতে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :