দেখতে গোলাপ ফুলের মতো হলেও নাম তার নন্দিনী। দৃষ্টিনন্দন ‘নন্দিনী’ সুভাষ ছড়াচ্ছে যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালীতে। ৪৫ রকমের রঙ-বেরঙের অধিকারী নন্দিনী ফুল প্রেমীদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। ঝড় বৃষ্টি ও প্রচণ্ড গরম বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এটি অক্ষত থাকে। এই ফুলের উৎপত্তি স্থল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর মান ও বিস্তৃতি বাড়াতে বিস্তর গবেষণা হয়েছে জাপানে।
জানা গেছে, পানিসারা গ্রামে দুই শতক জমিতে ‘নন্দিনী’ ফুলের চাষ করেছেন মিন্টু সরদার। এর মধ্যে কয়েক রঙের নন্দিনী ফুল ফুটেছে। একটি গাছে একটি করে ডাঁটা (স্টিক), প্রতি ডাঁটায় ৮ থেকে ১০টি করে কুঁড়ি।
মিন্টু সরদার জানান, সাড়ে তিন হাজার চারা রোপণ করেছিলেন। এর মধ্যে কিছু চারা মারা গেছে। প্রায় তিন হাজার গাছে ফুল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী। প্রতিটি স্টিক ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হবে। চারাসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রথম বছরেই ছয় লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি। নন্দিনী ফুল গাছের চারা একবার রোপণ করে দুইবার ফুল সংগ্রহ করা যায়।
নন্দিনী ফুল নিয়ে গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এ ফয়েজ এম জামাল। বর্ণবৈচিত্র্যের কারণে ফুলটি অল্প সময়ের মধ্যে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুলের বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮ টি রঙের নন্দিনী ফোটানো সম্ভব হয়েছে।
ড. এ ফয়েজ এম জামাল জানান, জাপান ও বাংলাদেশে ফোটা নন্দিনীর মধ্যে গুণগত মিল রয়েছে। পার্থক্য কেবল বীজের অঙ্কুরোদ্গমে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এ ফুলের সবচেয়ে ভালো মানের বীজ তৈরি হচ্ছে, যার অঙ্কুরোদ্গম হার ৮০ ভাগের বেশি। আর কোনো দেশে এত ভালো মানের বীজ উৎপাদন করা এখনো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, বেলে ও দোআঁশ মাটিতে নন্দিনীর বীজ ভালো হয়। লবণ-সহনশীল ফুলটি বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে চাষ করার সুযোগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে নন্দিনী উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। ভারত, থাইল্যান্ড, চীন, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানসহ আশপাশের দেশগুলোতে ফুলটির চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের ভূমিকা থাকবে অতুলনীয় বলে মনে করেন ফয়েজ।
তিনি জানান, এরমধ্যে দেশের একটি খ্যাতনামা কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি এ ফুলের চারা বাজারজাত করতে যোগাযোগ করেছে। সব ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই এ ফুলের চারা কৃষকের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দাম অবশ্যই ১০ টাকার বেশি হবে না।
উল্লেখ্য, নানা ধরণের উৎসবে সারাদেশে যে পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়, তার ৭৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় ফুলের রাজ্য পানিসারার গদখালীতে। প্রায় ৬ হাজার চাষি দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৫ ধরনের ফুলের চাষ করে থাকেন। এবার নতুন মাত্রায় যোগ হলো নন্দনী ফুল।