বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এ দিনটি ঘিরে গতকাল সোমবার থেকে ৩ দিনব্যাপী শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী ১৫৪ বছরের বৈশাখী মেলা। এ মেলা বর্ণাঢ্য উৎসবের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে আবহমানকাল থেকেই নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে।
গ্রামবাংলার যত পুরোনো ঐতিহ্য টিকে আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বৈশাখী মেলা। চৈত্র বৈশাখ মাস এলেই এ মেলার ধুমধাম পড়ে যায়।
চারদিকে সাজসাজ রব। এ মেলার মাধ্যমেই মানুষ তার পুরোনো দুঃখকে ভুলে একটু আনন্দের মাধ্যমে পরবর্তী যাত্রার সূচনা করে। চৈত্রের শেষ এবং বৈশাখ মাসে কৃষকেরা নতুন ফসল পায় এ সময় মেলা তাদের আনন্দ জোগায়।
ধনবাড়ীর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন। বাংলার প্রতি অগাত ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ তিনি বাংলা নববর্ষে পহেলা বৈশাখে বৈশাখী মেলার সূচনা করেন। মেলার রূপকে প্রসারিত করার জন্য পহেলা বৈশাখে পণ্যের উৎসব চালু করেন। উৎসবের সময় আগত লোকদের নবাববাড়ির পক্ষ থেকে বিশাল আয়োজনে খাওয়ানো হতো।
এ মেলার সময় পরবী দেওয়ার প্রথা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী প্রবর্তন করেন। এ প্রথা ধনবাড়ী এলাকায় এখনো প্রচলন আছে। এ মেলার সময় রাজকোষ থেকে রাজ কর্মচারীদের বিশেষ ভাতা দেওয়া হতো। যাতে রাজ কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ ভরে বৈশাখী মেলা উদযাপন করতে পারেন।
এ মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল লাঠি খেলা। এ ছাড়া বাঁশ, বেত, মাটির বিভিন্ন হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, ম্যাজিক ও পালাগান এ মেলার আকর্ষণ। এলাকার লোকজনের পহেলা বৈশাখ দিনটি আনন্দেই কেটে যেত। আজ অবধি সেই মেলা চলে আসছে। মেলার সৌন্দর্য ও আঙ্গিক বেড়ে যাওয়ায় এই বৈশাখী মেলা এক দিনের পরিবর্তে এখন ৩ দিন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও এখানে কাঠের মেলাটিও ঐতিহ্যপূর্ণ। এসব মেলা ৩ দিন থেকে ৭ দিনব্যাপী হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারো এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বৈশাখী মেলা। শত বছর ধরেই এ মেলা চলে আসছে।
টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধনবাড়ী সরকারি নওয়াব ইনস্টিটিউশন স্কুল মাঠে প্রতি বছরই বসে এমন এক ঐতিহ্যবাহী মেলা। শত শত বছর ধরে চলে আসা মেলাটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :