ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

যশোরে ৫০০ মিটারের মধ্যে ২০ হাসপাতাল-ক্লিনিক

বিল্লাল হোসেন, যশোর
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

একটি ভবনের দুই, তিন ও চার তলায় ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। জেনারেল হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনেই বেসরকারি এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানটি। আনুমানিক ২শ’ ৫০ বর্গফুটের একেকটি কক্ষে ৫/৬টি শয্যা। একই ভবনের নিচতলায় রয়েছে কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আরেকটি ফ্লাটে রয়েছে অর্থোপেডিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

আরেকটি অংশের দ্বিতীয়  তলায় রয়েছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিচ তলায় ল্যাবজোন স্পেশালাইজিড হসপিটালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উন্নতমানের কোনো যন্ত্রপাতি নেই।

ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ৫০০ মিটার এলাকার মধ্যে মোট ২০টি বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার সবগুলোই পাশাপাশি ভবনে। এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ লাইসেন্স নেই বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর সিভিল সার্জন অফিস।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল আসা রোগীদের কেন্দ্র করেই মূলত সরকারি হাসপাতালের সামনেই সারিবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বেসরকারি এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক।

অথচ ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস, প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ অধ্যাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল গঠন এবং পরিচালনার দিক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালের ৩০০ গজের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক থাকতে পারবে না। কিন্তু আইন অনুযায়ী যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়মনীতি।

অভিযোগ উঠেছে, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবার কোনো পরিবেশ নেই। দালালের ওপর নির্ভর করেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানকার নিয়োগকৃত দালালরা যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনার পর গলাকাটা বাণিজ্য করা হয়। বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্ট ও ল্যাব টেকনশিয়ান না থাকলেও রোগীদের প্যাথলজি রিপোর্ট হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উন্নতমানের যন্ত্রপাতিও নেই। মূলত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতানোর ধান্দায় ব্যস্ত রয়েছেন কমটেক কর্তৃপক্ষ।

ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। আলোচিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নানা অনিয়মের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে অপচিকিৎসার অভিযোগ। যশোর জেনারেল হাসপতালের কতিপয় চিকিৎসক সরকারি এই হাসপাতাল থেকে হাত পা ভেঙে যাওয়া রোগীদের গোপনে ইউনিক হসপিটালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

এখানে ডা. আনসার আলীর অপচিকিৎসায় চৌগাছার মাড়ুয়া গ্রামের দিনমজুর ফজলুর রহমানের ছেলে শামিনুর রহমানের (১০) জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন ফজলুর।

এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ইউনিক হসপিটালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ওই সময় হাসপাতালের পরিচালক উজ্জল বিশ্বাসও জখম হয়েছিলেন।

এদিকে ছোট ছোট কক্ষে ৬ থেকে ৮ টি করে শয্যা রয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করেও আরামদায়ক পরিবেশে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। চিকিৎসা সেবায় ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।