মানিকগঞ্জের ঘিওরে বৈশাখী মেলা উপলক্ষে দেড়শ বছরের ঐতিহ্য গ্রামবাংলার ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা নববর্ষকে ঘিরে উপচে পড়া মানুষের ভিড়ে জমে উঠেছে বড় কুষ্টিয়া মাঠে বৈশাখী মেলা।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে গত ১৪ এপ্রিল সোমবার পহেলা বৈশাখ থেকে ১৬ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঘৌড়দৌড়।
উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের তেরশ্রী এলাকার বড় কুষ্টিয়া মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বড় কুষ্টিয়া স্পোটিং ক্লাব ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এবং ঘিওর সবুজ শিবির ক্লাবের সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।
ম্যারাথন, লাঠি খেলা, সাইকেল রেইস, মোটরসাইকেল স্লো-মোশন রেইস, খাঁটি সরিষার তেল মাখা কলা গাছে উঠা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঘৌড়দৌড় ।
ঘিওর দৌলতপুর ও সাটুরিয়া- এই তিন থানা এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে উৎসবমুখর পরিবেশে উপচে পড়া মানুষের ভিড় আর পদচারণায় জমে উঠে মেলা। ঢাকার সাভার, টাঙ্গাইল, নাগরপুর, ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, আকাশীসহ দেশের দূর-দূরান্ত থেকে শতাধিক ঘোড়া এবং অর্ধশতাধিক সাইকেল ও মোটরসাইকেল স্লো-মোশন রেইসে প্রতিযোগীরা অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে আনুষ্ঠানিভাবে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন- ঘিওর সবুজ শিবির ক্লাবের সভাপতি হাজী মো. নাজমুল হোসেন। বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোতালেবের সভাপতিত্বে বড় কুষ্টিয়া স্পোটিং ক্লাবের সভাপতি অ্যাড. ফিরোজ আলম (বাবু) বৈশাখী মেলার শুভ উদ্বোধন করেন।
আহ্বায়ক ক্রীড়া পরিচালনা উপ-কমিটির মোহাম্মদ জাকির হোসেন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এতে সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন মেলা উদযাপন কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক মো. হারুন আর রশিদ।
বড় কুষ্টিয়া মাঠ সংলগ্ম প্রকাণ্ড বটগাছের শীতলছায়া আর সারি সারি তালগাছের মনোরম দৃশ্যপটে মানুষের চিত্তরঞ্জনে মেলাকে আরও আকৃষ্ট করে তুলেছে। দুপুর শেষে বেলা গড়ানোর সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মেলার মাঠ ও চারপাশ। মেলা উপলক্ষে মেয়ে ও মেয়ের জামাইসহ নাতিপুতিরা দলে দলে আসতে থাকে বড় কুষ্টিয়া গ্রামে।
অতিমাত্রা যোগ হয়ে বৈশাখী মেলা পরিণত হয় জামাই মেলায়। এ মেলায় মৃৎ শিল্পের মাটির হাড়ি পাতিল, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র এবং ছোট শিশুদের হরেক রকমের খেলনা সামগ্রীসহ প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয়ের পাশাপাশি হরেক বাহারি রং ও স্বাদের পিঠা, মিষ্টি, দই, জিলাপি, সন্দেশ, বাতাসাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সাংসারিক জিনিসের আমদানি ঘটে।
একদিকে ক্রেতারা জিনিসপত্র কিনতে পেরে খুশি। অপরদিকে বিক্রেতারাও মেলা উপলক্ষে বেশি বিক্রয়ে লাভবান। বড় কুষ্টিয়া গ্রামের বৈশাখী মেলায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্য ঘৌড়দৌড় মানিকগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যকে গ্রামবাংলার কৃষ্টিকালচার ধারণ করে আসছে বলে রূপালী বাংলাদেশকে জানান আয়োজক ও দর্শনার্থীরা।