যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ হতে যাচ্ছে। অধিকাংশ ডাক্তার চেম্বারে ঠিক মতো আসছেন না। আবার কয়েকজন ডাক্তার বৈকালিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন বলে জানান দিয়েছেন।
এতে অল্প খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, মাসিক মিটিংয়ে প্রায় ডাক্তার বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ জুন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৪২ চিকিৎসক সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিকিৎসা ও রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্পমূল্যে সেবা দিয়ে আসছিলো।
এরমধ্যে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ছিলেন ছয়জন, নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ একজন, নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ একজন, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ তিনজন, রিওমাটোলজি বিশেষজ্ঞ একজন, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ একজন, অর্থো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ তিনজন, সার্জারি বিশেষজ্ঞ চারজন, নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ তিনজন, সাতজন গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ ছয়জন এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ছয়জন চিকিৎসক ছিলেন। ৩০০ টাকা পরামর্শ দিয়ে সাধারণ মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা গ্রহণ করছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ঠিকমতো চেম্বারে আসছেন না। দায় এড়াতে তাদের সহকারীদের চেম্বারে সামনে বসিয়ে রাখেন। বৈকালিক চিকিৎসাসেবার সুফল মিলছে না বলে খুব বেশি রোগীও আসেন না।
কোন রোগী আসলে তাদের বসিয়ে রেখে সহকারীরা চিকিৎসকদের মোবাইলে কল দেন। এরপর চিকিৎসক ইচ্ছে হলে সেবা দিতে আসেন। নতুবা রোগীদের ফিস`র টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। এতে বিরক্ত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া থেকে এসেছিলেন রোজিনা বেগম নামে এক নারী। তিনি জানালেন তার শিশু পুত্র ওবায়দুল্লাহকে ডাক্তার দেখানোর জন্য এসেছিলেন। কিন্তু ডাক্তার বসেননি। তাই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন অল্প টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাসেবার আশায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার অধিকাংশ চিকিৎসকের চেম্বার ছিলো ফাঁকা। বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে কেউ অংশগ্রহণ করেননি।
শিশু বিভাগে ডা. জসিম উদ্দিন, মেডিসিন বিভাগে ডা. মধুসূদন পাল, গাইনী বিভাগে ডা. মাসকিয়া, নাক কান গলা বিভাগে ডা. এখলাসুর রহমান ও চর্ম রোগ বিভাগে ডা. কানিজ ফাতেমার দায়িত্ব পালনের কথা ছিলো। কিন্তু তারা কেউই বৈকালিক চেম্বারে আসেননি।
অভিযোগ উঠেছে, বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু থাকলে ডাক্তাররা তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারেন না। যে কারণে তাদের আয় কমে যায়। ব্যক্তিগত চেম্বারে বাণিজ্য বাড়াতে তারা সিন্ডিকেট করে বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় চেম্বার করা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ডাক্তাররা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করায় রোগীও কমে গেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর মাসিক মিটিংয়ে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তখন অধিকাংশ চিকিৎসক দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চেম্বারে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ আসতে পারবেন না বলে দিয়েছেন।
কিন্তু সরকারিভাবে নির্দেশনা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে বল প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। তবে তিনি সুপারিশ করেছেন, রোগীদের সুবিধার্থে সেবা কার্যক্রমটি চালু রাখার জন্য।