লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় বিচার দাবিতে উত্তাল পুরো জেলা। গ্রেপ্তার যুবকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) লালমনিরহাট টেকনিক্যাল কলেজ গেট ও নিহত ছাত্রীর ভোটমারী এস সি উচ্চ বিদ্যালয় গেটসহ ৬ স্থানে পৃথক পৃথক মানববন্ধন করে বিচার দাবি করা হয়।
নিহত জান্নাতি বেগম উপজেলার চর ভোটমারী গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে। সে স্থানীয় ভোটমারী এস সি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। গ্রেপ্তার যুবক বেলাল হোসেন একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী জান্নাতি বেগমকে বাড়িতে রেখে পাশে অসুস্থ মাকে (জান্নাতির নানিকে) দেখতে যান জান্নাতির মা। রাতে বাড়ি ফিরে মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাদের বাড়ির পাশে ভুট্টাক্ষেত থেকে স্থানীয় যুবক বেলাল হোসেনসহ ৪-৫ জনকে পালিয়ে যেতে দেখে সন্দেহ হয় জান্নাতির মায়ের। পরে সেই ভুট্টা খেতে গিয়ে তার মেয়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ভুট্টা খেতে মাটিতে পড়ে থাকা মৃত জান্নাতির মুখ থেকে গলা পর্যন্ত মাটি ঢুকিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘাতকরা।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই বেলাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত জান্নাতির বাবা ফজলুল হক। এ মামলায় রাতেই পুলিশ বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের ধারণা, ধর্ষণ নয়, গ্রেপ্তার বেলালের ভাইয়ের সাথে জান্নাতির ভাইয়ের দ্বন্দ্বের জেরে জান্নাতিকে হত্যা করতে পারে ঘাতকরা। গ্রেপ্তার বেলালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের গ্রেপ্তার ও হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্কুলছাত্রী জান্নাতির দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। তার একটি হাত ও একটি পা মুচড়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মুখে গুঁজে দেওয়া হয়েছে বালু ও মাটি। কানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ দিকে স্কুলছাত্রী জান্নাতি বেগম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বেলাল হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। জান্নাতি হত্যার বিচার দাবিতে জেলা শহরসহ পৃথক ৬ স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জান্নাতির স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষক, এলাকাবাসী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তিস্তা চরাঞ্চলের স্কুলছাত্রী জান্নাতি হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে লালমনিরহাট টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ভোটমারী এস সি উচ্চ বিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে জান্নাতির সহপাঠী ও শিক্ষকরা। ভোটমারী বাজারে মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কালীগঞ্জ থানার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে থানা ঘেরাও করে লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, জান্নাতির পরিবার আত্নীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা। এভাবে পৃথক ৬টি স্থানে কর্মসূচি পালন করে জান্নাতির হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো জেলা।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জান্নাতি হত্যা মামলায় বেলাল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের ভাইয়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার যুবকের ভাইয়ের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে একটি খবর পাওয়া গেছে। তাদের পারিবারিক কলহের জেরে এটি হতে পারে ধারণা করে তদন্ত করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :