অবশেষে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বন্ধ হয়ে গেল বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত পর্যটনকেন্দ্র মেঘলায় অবস্থিত মিনি চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রাখা ২৫টি বন্যপ্রাণীকে উন্নত চিকিৎসা আর সংরক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারা সাফারি পার্কে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের নেতৃত্বে একটি দল মেঘলা এলাকার মিনি চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন এবং এ সময় দুটি বড় ভালুক, একটি বাঁশ ভালুক, একটি বড় বিড়াল, ১৩টি হরিণ, দুটি খরগোশ ও ছয়টি বানর বান্দরবান জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বুঝে নেন। পরে সেগুলো খাঁচার সাহায্যে গাড়িতে করে ডুলহাজারা সাফারি পার্কে নেওয়া হয়।
এ সময় চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূরজাহানের কাছে বন্যপ্রাণীগুলো বুঝিয়ে দেন বান্দরবান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ রায়হান।
এদিকে, এর আগে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে এ ধরনের মিনি চিড়িয়াখানা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূরজাহান। দীর্ঘদিন পর বন্যপ্রাণীগুলোকে উপযুক্ত স্থানে পাঠাতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূরজাহান জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণীদের প্রতি অত্যাচার করা হচ্ছে। আর আমরা বন্যপ্রাণীদের এ অত্যাচার থেকে মুক্ত করে এখন থেকে তাদের সঠিক স্থানে সংগ্রহ করবো। এখানে বন্যপ্রাণী রাখার অনুমতি ও পরিবেশ নেই। ফলে দীর্ঘদিন ছোট ঘরে বন্দী থেকে প্রাণীগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বান্দরবান বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান জানান, চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বান্দরবান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরপরই আমরা বন্যপ্রাণীগুলোকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারা সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়ায় জন্য কাজ শুরু করি এবং সবার সহযোগিতায় ২৫টি বন্যপ্রাণীকে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করার চেষ্টা সফল হয়েছি।
মেঘলায় মিনি চিড়িয়াখানা বন্ধ ও বন্যপ্রাণীগুলোকে সাফারি পার্কে পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম মঞ্জুরুল হক।
এর আগে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস বিহীন বন্দী ও অসুস্থ ভাল্লুকের একটি ভিডিও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে পড়লে বান্দরবানের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বন্য প্রাণীগুলোকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যাপারে নিজে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেন।
১৯৯৪ সালে একটি ভালুক শাবক দিয়ে মেঘলা চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে মিনি চিড়িয়াখানাটিতে অজগর সাপ, মায়া হরিণ, খরগোশ, বানরসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হতো দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য।