ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ছেলেকে বিষ খাইয়ে মায়ের বিষপান

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১০:০২ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে ৫ বছরের ছেলেকে বিষ খাইয়ে মা নিজেও পান করেন বিষ। এর এক সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দু’জনই।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মা বিউটি আকতার (২৮) ও ছেলে মুসার মৃত্যু হয়৷

বিউটি আকতার জেলা শহরের নিমনগড় এলাকার মতিউর রহমানের স্ত্রী। তাদের ৫ বছরের ছেলে মুসা৷

স্বামীর অনলাইন জুয়ায় আসক্তি ও সংসারে অভাব অনটনের কারণে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। এর জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি ওই নারীর পরিবারের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার স্বামী।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মতিউর রহমান ও বিউটি আক্তার দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মাইশার বয়স ১১ বছর ও ছেলে মুসার বয়স পাঁচ বছর। মতিউর মসজিদে খাদেমের কাজ করলেও পরবর্তীতে জেলা শহরের বাস্টস্ট্যান্ডে চা বিক্রি করতেন৷ ব্যবসায় বড় লোকসান হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। আসক্ত হন অনলাইন জুয়ায়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াবিবাদ হতো। বিউটি স্বামীর এমন কর্মকাণ্ডে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

আর এমন কর্মকাণ্ডের কারণে গত ১১ এপ্রিল মতিউর তার স্ত্রীকে না জানিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখান থেকে মোবাইলে বিউটির সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার৷ এর কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারেন বিউটি তার ছেলে মুসাকে বিষ খাইয়ে নিজে বিষপান করেছেন৷ তবে মেয়ে মাইশা পালিয়ে যাওয়ায় তাকে খাওয়াতে পারেননি৷

পরে তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থানান্তর করেন। পরে সেখানেও তাদের অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

কিন্তু টাকার অভাবে তারা ঢাকায় না নিয়ে ১৫ এপ্রিল রাত ২টায় আবার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে মুসা ও তার মা বিউটি ১ ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান।

এদিকে, মৃত বিউটি আক্তারের বাবা আব্দুল বারেক বলেন, আমার মেয়ের পরিবারের অন্য কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই, মতিউর জুয়া খেলে।  প্রায় রাতে বাড়ি ফিরত না, তাই এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো।

বিউটির আকতারের মামা খোরশেদ আলম বলেন, ছেলেটি জুয়া খেলে সব শেষ করেছে। আগে ভালো ব্যবসা করত। তবে কী কারণে আমার ভাগনি আত্মহত্যা করেছে, তা আমরা জানি না।

অভিযোগ অস্বীকার করে মতিউর রহমান বলেন, আমি ব্যবসায় ৩ লাখ টাকা লোকসান করেছি। সংসারে অভাব, তাই বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। পাসপোর্টও করেছি। আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ায় তার সাথে আমার ও শ্যালকের কথা-কাটাকাটি হয়। আমার স্ত্রীর রাগ একটু বেশি। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনি, আমার ছেলেকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষপান করেছে। টাকা না থাকায় তাদের ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারিনি।

পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম সোহরাওয়ার্দী বিষপানে মা ও ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা আত্মহত্যার কারণ জানার চেষ্টা করছি। পরিবারের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’