ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

বাগমারার আলু যাচ্ছে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম
আলু প্যাকেটিংয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা থেকে কুম্ভীকা জাতের আলু রপ্তানি করা হচ্ছে মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে। এ অঞ্চলের কৃষকরা আলু উত্তোলন ও প্যাকেটিংয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

প্রতিদিন এ অঞ্চল থেকে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক আলু পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে। বিষয়টি স্থানীয় আলুচাষিদের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা না থাকার কারণে হতাশাও রয়েছে তাদের মধ্যে। তবে সঠিক নির্দেশনা পেলে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে। অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সঞ্চার হবে।

বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের যাত্রাগাছী গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা নিজেদের আঙিনায় বস্তায় আলু প্যাকেট করছেন। মূলত বড় আকৃতির, ১০০ গ্রামের বেশি ওজনের আলুগুলোকেই রপ্তানির জন্য গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতি প্যাকেটে ৭ কেজি করে আলু নেয়া হচ্ছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এমন সম্ভাবনা এ অঞ্চলের জন্য ভালো। তবে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে সঠিক কোন নির্দেশনা নেই। নেই কোন ব্যবস্থাপনাও।

কৃষকরা আরো জানান, মুলত কুম্ভিকা জাতের আলু নেয়া হচ্ছে রপ্তানির জন্য। কিন্তু কুম্ভিকা জাতের আলু এ অঞ্চলে চাষ হয়েছে কম। অন্য জাতের আলু যেখানে ৮০ শতাংশ চাষ হয়েছে সেখানে কুম্ভিকা জাতের আলু চাষ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।

এদিকে আলু এতো বেশি উৎপাদন হয়েছে যে হিমাগারে জায়গা হচ্ছে না। অনেকের আলু এখনো বাড়ির উঠানে বা বাগানে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। আলু রপ্তানির পরিসর বাড়ানো গেলে কৃষকরা উপকৃত হতো।

বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, কুম্ভিকা জাতের নতুন আলু রপ্তানি শুরু হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হচ্ছে। পরিপূর্ণভাবে বিষয়গুলো জেনে কৃষকদের মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, এই রপ্তানি কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশাবাদী। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, কিছুদিন আগেও দেশে আলুর ঘাটতি দেখা দিলে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়েছিল। তবে এবার দেশে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ইতোমধ্যেই নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বগুড়া, জয়পুরহাট ও মুন্সীগঞ্জে ব্যাপকভাবে আলুর চাষ হয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ভিয়েতনাম ও ব্রুনাইয়ে আলু রপ্তানি হয়। এর মধ্যে মালয়েশিয়াতে সবচেয়ে বেশি আলু রপ্তানি হয়। ডায়মন্ড, কুম্ভীকা, গ্রানোলা, কার্টিনাল ও ম্যানিলা জাতের আলু এসব দেশে পাঠানো হয়, যার মধ্যে ডায়মন্ড ও গ্রানোলা জাতের আলুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে রাজশাহীর বাগামারা থেকে নেয়া হচ্ছে কুম্ভিকা জাতের আলু।

একজন কৃষক জানান, এই বছর কুম্ভীকা জাতের আলু রপ্তানি হওয়ায় আমরা কিছুটা আশান্বিত। বড় আলুগুলোর প্রতি মণ ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এক্সপোর্টারের কাছে। আর ছোট আলুগুলো স্থানীয় বাজারে ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে কৃষকদের অভিমত, সকল প্রকার আলু রপ্তানির সুযোগ না থাকায় অনেক সময় তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়।

এক চাষি বলেন, দেশে আলুর যে দাম, তা দিয়ে আলুর বীজের খরচই উঠে না। আবার অনেকেই জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন, তাদের খরচ আরও বেশি। যদি ছোট আকারের আলুগুলোকেও রপ্তানির আওতায় আনা হতো, তাহলে কৃষকরা আরও লাভবান হতো।