ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

মোবাইলের জন্য বিক্রি করা সন্তানকে উদ্ধার

ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম
মা লাবনী আক্তার লিজার কোলে শিশু সন্তান তামিম। ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

পারিবারিক কলহের জেরে বিক্রি করা শিশুটিকে উদ্ধার করেছে মধুপুর থানা পুলিশ। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ছুনটিয়া গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

মধুপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. রাসেল মিয়া এই উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন বলে জানিয়েছেন মধুপুর থানার ওসি মো. এমরানুল কবীর।

স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিণ্যে জের ধরে গত আট দিন আগে এই অমানবিক কাজ করেছেন হৃদয়হীনা মা লাবনী আক্তার লিজা (১৮)।

ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌরশহরের শেওড়াতলা এলাকায়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, উপজেলার পুন্ডুরা শেওড়াতলা এলাকার আজম আলীর ছেলে রবিউল ইসলামের সাথে গোপালপুরের বলাটা গ্রামের লিটন মিয়ার মেয়ে লাবনী আক্তার লিজার দুই বছর আগে বিয়ে হয়।

মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয় ধরে তাদের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই রবিউলের অস্বচ্ছলতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।

অবস্থা বেগতকি দেখে রবিউল সংসারে শান্তির প্রয়োজনে বাড়ির পাশেই ঘরভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত চার মাস আগে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।

রবিউল ইসলাম জানান, আমাদের ছেলে তামিমের জন্মের পর থেকে সংসারে শান্তি নেমে আসে। অল্প কয়েকদিন আগে লাবনী আমার ছেলে তামিমকে নিয়ে লাবনীর বোনের বাড়ি ভূঞাপুরে যায়। কয়েকদিন পর বাড়ি আসতে বললে লাবনী দুর্ব্যবহার করে। আমার সাথে ঘরসংসার করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

আমি কয়েকদিন পর আবার ফোন করে বলি তামিমের দাদা অসুস্থ। ছেলেকে নিয়ে আসো। সে তামিমকে দেখতে চাচ্ছে। লাবনী তাতেও ফিরে আসেনি।

বারবার যোগাযোগের পর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) লাবনী সন্তান বিক্রি করে ফেলার খবর দেয়। পরে কৌশলে লাবনীকে ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়ায় ডেকে এনে ধরে বাড়ি নিয়ে আসি। এ সময় সে শিশু তামিমকে বিক্রি করার কথা স্বীকার করে। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

শিশু তামিমের মা লাবনী আক্তার লীজা বলেন, আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি মনির নামের একজনের সহযেগিতায় গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সিরাজগঞ্জের এক লোকের কাছে ৪০ হাজার টাকায় তামিমকে বিক্রি করেছি। ওই টাকা দিয়া মোবাইল, পায়ের নুপুর ও নাকের নথ কিনছি। এইডা আমার ভুল হইছে।

তামিমের ফুপু রাজিয়া জানান, আমার ভাই রবিউলের সাথে বিয়ের পর থেকেই লাবনীর ঝগড়া হতো। ফকিরের বাড়ি থাকবে না বলেও গালি দিত। পরে ভাড়া বাসায় থাকতো। আমাদের কাছে একাধিকবার বলেছে ঘরসংসার করবে না। আমরা বিশ্বাস করিনি। কয়েকদিন আগে সে বাড়ি গেছে। এখন পেটের সন্তানও বেইচা ফালাইছে। আমরা দ্রুত শিশুকে উদ্ধার ও পাষন্ড লাবনীর বিচার চাই।

এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ওসি মো. এমরানুল কবীর বলেন, লাবনী নামের এক কিশোরী মা তার ছেলেকে বিক্রি করেছে বলে আমাদের জানায় তার স্বামী রবিউল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শিশুটির মা লাবনীকে নিয়ে রাতেই পরিদর্শক তদন্ত মো. রাসেল মিয়ার নেতৃত্বে অভিযান পারিচালিত হয়।

টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। শিশুটি ঘাটাইলের ছুনোটিয়া গ্রামে তার পালিত মায়ের কাছে নিরাপদেই ছিল। শিশুটির মা লাবনী ক্রেতার নাম ঠিকানা না জানায় উদ্ধার অভিযানে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়েছে।