ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, আদালতের নাজির সাময়িক বরখাস্ত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
লালমনিরহাট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ইয়াসিন আরাফাত। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির (চলতি দ্বায়িত্ব) ইয়াসিন আরাফাতের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে বেশ আলোচনা জন্ম দিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিচার প্রার্থীর নিকট জোড় করে ঘুষ আদায় করছেন আদালতের নাজির ইয়াসিন আরাফাত। পরে একপর্যায়ে আদালত কতৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

ভাইরাল ওই ভিডিও সূত্রে জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল বিকালে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ইয়াসিন আরাফাত এক বিচার প্রার্থীর নিকট বন্ড দাখিলের অযুহাতে ঘুষ দাবি করে।

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি আদালত প্রাঙ্গণে পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করা এক সংবাদকর্মীকে বিষয়টি অবগত করেন। তিনি তাৎক্ষণিক ওই ব্যাক্তিকে নিয়ে নাজিরের কাছে গেলে তখনও তিনি ঘুষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে ওই সাংবাদিক ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি গোপন ক্যামেরায় ধারন করেন।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, নাজির ভুক্তভোগীর কাছে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। ঘুষের টাকার একটি অংশ ওই রুমে থাকা হিসাব রক্ষক গণেশ চন্দ্রকেও ভাগ দিতে হবে বলেও জানান তিনি। টাকা দেওয়ার এক পর্যায়ে রশিদ চাইলে নাজির ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘এসবের কোনো রশিদ হয় না।’

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই নাজির সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি করে ঘুষের টাকা লুকানোর চেষ্টা করেন। তবে তিনি তার ড্রয়ারে টাকা রাখতে না পাড়ায় তা সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পরে।

ওই সাংবাদিক বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অটুট রাখতেই দুর্নীতিবাজের গোপন ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘ঘুষ দাবি করা ওই নাজীর সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছে জোরপূর্বক ঘুষ আদায় করেন এরকম অভিযোগ আমরা অনেক আগেই পেয়েছি। আমি আশা করবো, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, ‘লালমনিরহাট আদালতের কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে কাজ করে না। কোর্টের নাজির, জিআরও, পেশকারের কাছে গেলেই টাকা দিতে হবে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।’

ঘুষের টাকা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজির ইয়াসিন আরাফাত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি টাকা নেইনি। ওই ব্যক্তি এখানে জোর করে টাকা রেখে গেছে।’ এদিকে ঘুষের টাকার একটি অংশ হিসাব রক্ষক গণেশ চন্দ্র নেন এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণেশ চন্দ্র বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সহ-সভাপতি সুপেন দত্ত বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান সচেতন মহলের।’ অভিযুক্ত নাজিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন তিনি।

লালমনিরহাট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর গত বুধবার অভিযুক্ত নাজির ইয়াসিন আরাফাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’