মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্য গ্রুপের রক্ত পুশ করায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনরা চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন। এ ঘটনায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।
এর আগে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল চারটার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অন্য গ্রুপের রক্ত পুশ করায় রোগীর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।
মারা যাওয়া ওই রোগীর নাম মো. বিল্লাল। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
রোগীর পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে মো. বিল্লাল মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তার শরীরে ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করতে হবে বলে জানান দায়িত্বরত চিকিৎসক। এরপর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে ভুল করে ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের বদলে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত রোগীর স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়।
সেটি হাসপাতালে দায়িত্বরত এক নার্সের কাছে দেন রোগীর স্বজনরা। এরপর দায়িত্বরত চিকিৎসকের অর্ডারপত্র পাওয়ার পর রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। এর ৬ ঘণ্টা পর রোগীর মৃত্যু হয়।
নিহত রোগীর স্বজন জিসান বলেন, ‘আমরা একটি স্লিপ দেওয়ার পরে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এটি ভুল রক্ত না কি সঠিক রক্ত, সেটি বোঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছে। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, তিন জায়গায় তো ভুল হওয়ার কথা নয়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই আমাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য আজকে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।’
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সে সময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়।’
‘এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আর আমি গতকাল রাত আটটায় ডিউটি শুরু করি। পরে বিষয়টি জানার পর রোগীকে বাঁচাতে সাধ্যানুয়ায়ী চেষ্টা করেছি। কিন্তু রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল।’
রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ কী উল্লেখ করা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও ঘটনার সময় দায়িত্বরত ডা. নূরজাহানের সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘গতকালের ঘটনায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
