ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

১২ বছরে অন্তঃসত্ত্বা, সালিশ থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০৯:১১ পিএম
প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনার মদনে ধর্ষণে ১২ বছর বয়সী এক শিশু অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সালিশের আয়োজন করেন স্থানীয় মাতব্বররা। সেখান থেকে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গেছেন অভিযুক্ত মাহিন ও তার স্বজনরা। এ নিয়ে এলাকায় চলছে সমালোচনা।

উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের জাওলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মাহিন মিয়া জাওলা গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। মেয়েটি এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

অভিযোগের সত্যতা জানতে রোববার (২০ এপ্রিল) ওই গ্রামে গিয়ে শিশুটির দাদিকে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত মাহিন মিয়ার বাড়িতে গেলে পাওয়া যায় তার চাচা সাদেক মিয়া ও বাবা আরজু মিয়াকে। 

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েটির বাবা কয়েক বছর আগে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। পোশাক কারখানায় চাকরি করেন মা। শিশুটি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ দাদির কাছে থাকে। সুযোগ বুঝে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে স্থানীয় মাহিন মিয়া। অনৈতিক সম্পর্কের একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। 

শারীরিক পরিবর্তন দেখে মেয়েটির খালা জানতে চাইলে মাহিনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে। বিষয়টি নিয়ে মাহিনের বাবার সঙ্গে কথা বললে তারা মেয়েটির সঙ্গে মাহিনের বিয়ের কথা জানায়।

এ ঘটনা নিয়ে গত শুক্রবার রাতে সালিশ বৈঠকে বসেন গ্রামের মাতব্বররা। এ সময় মেয়েটিকে ঘরের ভেতর একা পেয়ে তুলে নিয়ে যায় মাহিনসহ কয়েকজন। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও তাদের সন্ধান মিলছে না।

মেয়েটির দাদি বলেন, ‘মাহিন প্রায় সময়ই আমাদের ঘরে যাওয়া-আসা করত। পরে জানতে পারি আমার নাতনি অন্তঃসত্ত্বা। মাহিন তার সঙ্গে জোর করে এসব করছে বলে আমাদের জানায়। বিষয়টি মাহিনের পরিবারকে জানালে তারা বিয়ে করাবে বলে জানিয়েছে। শুক্রবার রাতে বাড়িতে দরবার (সালিশ) করার পর আমার নাতনিকে মাহিন কোথায় নিয়ে গেছে, জানি না। এখন শুনতাছি মাহিন আমার নাতনির পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করবে। কিন্তু বিয়ে করবে না।’

তিনি আরও বলেন ,‘আমরা খুবই গরিব মানুষ। থানায় কীভাবে অভিযোগ করব তাও বুঝতেছি না। আমি এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’

অভিযুক্ত কিশোরের বাবা আরজু মিয়া জানান, বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু দু’জনেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। খোঁজাখুঁজি করছেন তারা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন রুবেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা গ্রামে বৈঠক করেছি। পরে শুনেছি মেয়েটিকে মাহিন জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে। বৈঠকে ছেলের পরিবার খুবই খারাপ আচরণ করেছে। এ ঘটনার বিচার হওয়া দরকার।’

মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসানের ভাষ্য, ‘এ ঘটনা জানতে পেরে রোববার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মেয়েটির পবিবারকে বলা হয়েছে থানায় অভিযোগ করতে।’ নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অলিদুজ্জামনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।