নাটোরে অটোরিকশায় শুইয়ে এক তরুণের পিঠে জুতা পায়ে চেপে ধরে আছেন আরেক তরুণ। সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন উচ্চ স্বরে গান বাজাচ্ছেন। পায়ের নিচে থাকা তরুণ চিৎকার করে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। এভাবেই শহরের প্রধান সড়কে প্রায় দুই কিলোমিটার ওই তরুণকে ঘোরানো হয়।
রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে প্রকাশ্যে নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী তরুণের নাম ফয়সাল হোসেন (২৫)। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী। বাড়ি শহরের কানাইখালি মহল্লায়। নির্যাতন করা তরুণেরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মী।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ কর্মী ফয়সাল হোসেন জানান, তিনি শহরের ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে বাড়িতে ফেরার সময় পেছন থেকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক রিমন।
তারা নবাব সিরাজ–উদ–দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি এস এম জুবায়েরের অনুসারী। তারা প্রথমে তাকে সড়ক বিভাজকের ওপর ফেলে মারধর করেন। পরে অটোরিকশায় তুলে নির্মম নির্যাতন করেন এবং শহর ঘুরে বেড়ান।
মারার কারণ জানতে চাইলে তারা তাকে বলেন, ‘তুই ছাত্রলীগ করিস কেন?’ পরে ‘আর ছাত্রলীগ করব না’- মর্মে মুচলেকা নিয়ে তারা তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
ঘটনার পর ছাত্রদল নেতা নাঈম ও রিমন গা ঢাকা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তাদের নেতা নবাব সিরাজ–উদ–দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি এস এম জুবায়ের জানান, ঘটনাটি তার অগোচরে ঘটেছে। যারা ঘটিয়েছেন, তারা সাধারণ ছাত্র। কাজটা ঠিক হয়নি। তবে ছাত্রলীগের ছেলেরা ক্ষমতায় থাকতে এর চেয়েও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড করেছেন। তারা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের রাস্তায় পৈশাচিক নির্যাতন করেছেন।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট করে দস্তগির ইসলাম নামের এক তরুণ নিজেকে ‘মুজিব সেনা’ পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, ‘এই বর্বরতা কি ভুলে যাব আমরা? কখনোই না। বহু গুণে ফিরিয়ে দেব। নাটোর পৌর ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী কদরের (ফয়সাল) ওপর এই বর্বরতার বিচার একদিন নাটোরের মাটিতেই করব, ইনশাআল্লাহ।’
নাটোর সদর থানার ওসি মাহবুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা আগে কেউ বলেননি। কেউ অভিযোগও দেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।