নাটোরের বড়াইগ্রামে এক রাতে পাঁচজন যুবককে র্যাব পরিচয়ে অপহরণের ১২ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু আজও তাদের খোঁজ মেলেনি। অপহৃতদের মধ্যে একজন ছিলেন বিজিবি সদস্য।
২০১৩ সালের ১৯ মে রাতে বড়াইগ্রামের মহিষভাঙ্গা, কালিকাপুর, কাটাশকুল ও গুডুমশৈল এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। সেই রাতের ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক আর হতাশা এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, র্যাবের পোশাকে অন্তত ১৪-১৫ জন সশস্ত্র ব্যক্তি তিনটি মাইক্রোবাসে এসে গ্রামের পর গ্রামে হানা দিয়ে ইব্রাহিম খলিল, কামাল হোসেন, তৈয়ব আলী, বিজিবি সদস্য রাসেল গাজী এবং কলেজছাত্র সেন্টু হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করায় এক ব্যক্তিকে নির্যাতনও করা হয়।
পরদিন পরিবারের সদস্যরা নাটোর র্যাব অফিসে গিয়ে কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় চারটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সঙ্গে দায়ের করা হয় একটি মামলাও। এরপর কেটে গেছে ১২টি বছর। পুলিশ বা র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই, পরিবারগুলো আজও প্রিয়জনের ফেরার অপেক্ষায়।
সেন্টু হোসেনের বৃদ্ধ পিতা আফতাব উদ্দিন মৃধা বলেন, ছেলে অন্যায় করলে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। কিন্তু অপহরণ করে বছরের পর বছর গুম করে রাখা তো বেআইনি। তিনি অপহরণকারীদের বিচার দাবি করেন।
অপহৃত তৈয়ব আলীর মা হাসিনা বেগম জানান, এই দীর্ঘ সময়ে বহু খুঁজেও সন্তানের সন্ধান পাননি। ছেলেটি মৃত না জীবিত তা তারা জানেন না। ছুটি কাটাতে বাড়িতে এসেছিল ছেলেটি।
একইভাবে রাসেল গাজীর পিতা-মাতাও ছেলের সন্ধান না পাওয়ায় হতাশ। তিনি জানান, এই দীর্ঘ সময়ে বহু খুঁজেও সন্তানের সন্ধান পাননি। ছেলেটি মৃত না জীবিত তা তারা জানেন না। অনেক কষ্টে সন্তানকে বিজিবিতে চাকরি দিয়েছিলেন। ছুটি কাটাতে বাড়িতে এসে ছেলেটি অপহরণ হয়েছে। তিনি সন্তানকে ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
তবে নাটোরের পুলিশ মোহাম্মদ আমজাদ বলেন, ৫ ব্যক্তি অপহরণ বা গুমের যে অভিযোগ রয়েছে তা বর্তমানে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু ক্লু তাদের হাতে এসেছে। বেশকিছু বিষয়কে সামনে রেখে বিষয়টিকে তদন্তের পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু পরিবারগুলোর চোখে এখনো দেখা যায় না আশার আলো। তাদের একটাই দাবি, সন্তানদের ফেরত চাই অথবা জানতে চাই তারা বেঁচে আছে কি না।
১২ বছরেও না পাওয়া সেই উত্তর যেন এক অনন্ত অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :