গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডলের একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেই অডিওতে ওসির সঙ্গে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামের ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার কথা বলেছেন।
অডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকেই ওসি বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছেন বলেও জানান ওই ব্যবসায়ী।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার।
ঝুট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ লেনদেন নিয়ে ওসি বলেন, ‘তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলা না, ফুল হাতা। আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসব। তোমার নানা আমাকে দেখে না কেন? ৫ হাজার, ১০ হাজার এটা কোনো টাকা? এই টাকা দিয়ে কী হয়। আমি এত চাপ নিচ্ছি। তোমার নানাকে বইলো আমাকে লাখপাঁচেক টাকা দিতে।’
সেলিম শিকদার বলেন, ‘অনেক টেনশনে আছি, অনেক হুমকি (থ্রেড) খাইলাম। আমার এক আত্মীয় আছে, তার মাধ্যমে গত রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকেই ওসি ফোন দিতাছে। পরে রাতে যখন রেকর্ড ফাঁস হয়ে গেছে, তখন আর ফোন দেয় নাই। ওনার তৈরি করা একটি লেখা (প্রেসক্রিপশন) আমাকে ধরাইয়া দিছে।’
‘কয় এভাবে এভাবে ফেসবুক লাইভে এসে বলবেন এই রেকর্ড ভুয়া, তাহলে আমার কোনো প্রবলেম হবে না, আপনারও কোনো প্রবলেম হবে না। নইলে কিন্তু আপনার খবর আছে।’
তিনি জানান, উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামে ফর্মূলা ওয়ান স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড কারখানা তার (সেলিম শিকদার) নানা ১০-১৫ বছর আগে জমি কিনে দেওয়াসহ কারখানা স্থাপনে সহযোগিতা করেন।
সেলিম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা ঝুট ব্যবসাসহ কারখানার ভালোমন্দ দেখে আসছি, এখানে কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যবসা করতাম না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আমাদের ব্যবসায় বাধা দিয়েছিল। কিন্তু কারখানার মালিক বলেছিল, যেহেতু ওনি আমার কারখানার জায়গা-জমি কিনে দিয়েছে, এই সূত্রে ওনাকে ব্যবসা দিয়েছি। এখানে রাজনৈতিক লোকের কোনো কাজ হয়নি আরকি। এই সূত্রে আমরা ব্যবসা করতাম।’
সেলিম শিকদার আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে ওসি থানায় আসার পর পুরোনো এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে ফোন দিয়ে থানায় যেতে বলছে। থানায় যাওয়ার পর ওসি বলছে, যদি ব্যবসা করতে চান তাহলে আমাকে মান্থলি টাকা দিতে হবে দুই লাখ করে।’
প্রথম দিন পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘তারপর ওনারে বললাম, স্যার ব্যবসায় হয় ২-৩ লাখ টাকা। আপনারে যদি দুই লাখ টাকা দিয়া দেই, তাহলে কীভাবে হবে। পরে ওই জায়গায় এক লাখ টাকা মাসে তার সঙ্গে চুক্তি হলো। এক লাখ টাকা করে দিয়েছিলাম। প্রথম মাসে এক লাখই নিছিল, পরের মাসে দুই লাখ। দেড় লাখ দুই লাখ এরকম করে নিত। এ ছাড়াও সাহাবুদ্দিন নামে ৫০ হাজার, আমার খালু জাকিরের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। অডিওতে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল।’
‘পরে ওসিকে বললাম, ব্যবসা বাণিজ্য ওই রকম নেই। যে দুই লাখ টাকা বলছেন সেই দুই লাখ টাকা আমি দেব। কিন্তু ৫ লাখ টাকা দিতে পারব না। পরে এই টাকা না দেওয়ায় আমাকে যেকোনো নেতার মাধ্যমে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করে। আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। ১০ লাখ টাকা দিতে হবে, নইলে ১০টা হত্যা মামলা দিয়ে দেবে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের শর্তে বাসায় গরু বিক্রির আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়।’
‘ওনি বলেছিলেন, ৫৪ ধারায় চালান দিয়েছিল। টাকা হাতে পাওয়ার পর ওসি থানায় আসেনি। আমাকে আদালতে নেওয়ার পর আর তিনি থানায় আসেন। পরে আমাকে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় চালান দেওয়া হয়।’
ফোনে ধারণ করা রেকর্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মাসকয়েক আগে শ্রীপুর পৌরসভার তুলা গবেষণা মাঠ এলাকায় ওসি আমাকে ডেকে নেন। সেখানে যাওয়ার পর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে ব্যবসা করলে তাকে টাকা দিতে হবে।’
শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, এটি আমি শুনেছি, এটি আমার কণ্ঠ না। আমার কথা এডিট (সম্পাদনা) করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র।’
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী যাবের সাদেকের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।