২০১২ সালে ১৭ বছরের কিশোর আকরাম মিয়া সিলেটের বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তখন থেকেই নিরুদ্দেশ ছিলেন তিনি। সবশেষ প্রায় ১৩ বছর পর নিজের মা-বাবার কাছে ফিরেছেন আকরাম।
আকরাম মিয়া মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ এলাকার শাখাওয়াত মিয়া এবং জরিনা বেগমের সন্তান। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক।
জানা গেছে, ওই স্বজনের বাড়ি থেকে লুকিয়ে বেরিয়ে আসেন আকরাম। এরপর থেকে থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। সেখানে মেধা বিকাশ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক জহিরুল ইসলাম সাগরের সঙ্গে পরিচয় হলে পারিবারিক অবস্থা জানান আকরাম। পরে জহিরুল ইসলামের সহযোগিতায় তিনি পরিবারকে খুঁজে পান।
আকরামের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাখাওয়াত মিয়ার সাত ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে আকরামকে দিয়ে দেন সিলেটের এক স্বজনের কাছে। এ ঘটনা প্রায় ১৩ বছর আগের। আকরামের বয়স তখন ১৬-১৭ বছর। মানসিক অশান্তির কারণে তিনি ওই স্বজনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। চলে আসেন আখাউড়ায়।
রবিউল মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি আকরামকে কাছে টেনে নেন। থাকতেন পৌর এলাকার খড়মপুর বাইপাসের কাছে। রবিউলকে বাবা বলেই ডাকতেন আকরাম। রবিউলের স্ত্রীকে মা। পেশায় অটোরিকশা চালক আকরামকে বিয়েও করানো হয়।
সম্প্রতি রবিউল মিয়া মারা যান। তার স্ত্রী চলে যান অন্যত্র। এ অবস্থায় চাঁনপুর গ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলে যান আকরাম। সেখানেই মাস দুয়েক ধরে আছেন তিনি।
শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম সাগর জানান, আকরামের অটোরিকশা দিয়ে মাঝে মাঝে যাতায়াত করতাম। কথায় কথায় সে তার পারিবারিক অবস্থার কথা জানায়। সেই পালিত বাবার মৃত্যুর পর আকরাম একাকিত্ববোধ করতে থাকে। তখন পরিবারকে খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দিই। রোববার দুপুরে তাকে নিয়ে কমলগঞ্জ যাই। অনেক চেষ্টার পর তার বাড়ি খুঁজে পাই।
বাবা-মা ও স্বজনরা আকরামকে পাওয়ার পর এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আশপাশের লোকজনও ছুটে আসে। রাতেই আকরামের বাবা-মা আখাউড়াতে ছুটে আসেন। ছেলে কোথায় থাকে কীভাবে চলে সেটা দেখতে তাদের ছুটে আসা।
আকরাম মিয়া বলেন, ‘আমার যে কি খুশি লাগতেছে তা বলে বোঝাতে পারব না। আমাকে দেখতে বাবা-মা, ভাই-বোনসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছেন।'
আকরামের মা জরিনা বেগম বলেন, ‘দিনের পর দিন বছরের পর বছর ছেলেকে খুঁজেছি। এমনকি আখাউড়াতেও খোঁজা হয়। হঠাৎ করে ছেলেকে এভাবে পেয়ে যাব কল্পনাও করিনি। আমি তাকে দেখে প্রথম তো অবাকই হয়েছি। বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমার।’
আপনার মতামত লিখুন :