মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘ও’-এর বদলে ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার সত্যতা মিলেছে তদন্তে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরের চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. সফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘রোগীকে ভুল রক্ত পুশ করার সময় ডিউটিতে ছিলেন ডা. নুরজাহান, ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. অথৈ এবং নার্স হিসেবে ডিউটিতে ছিলেন সিনিয়র স্টাফ নার্স সোনিয়া খাতুন, মৌসুমী আক্তার ও ইন্টার্ন নার্স বৃষ্টি সমাদ্দার।’
ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আজই প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারব না। কারণ, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আমার নয়, আমার কাজ তদন্ত প্রতিবেদন ডিজি স্যারের কাছে পাঠানো। ব্যবস্থাও তিনিই নেবেন। তবে আমরা আশা করছি, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীরা শাস্তির আওতায় আসবেন।’
তদন্ত কমিটির সদস্য হাসপাতালটির আরেক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভুল গ্রুপের রক্ত পুশ করায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলা ও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের দোষ ছিল।’
তিনি আরও জানান, রোগীকে ভুল রক্ত পুশ করার কাগজে স্বাক্ষর করেছেন ডা. অথৈ। তবে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করার সময় ডা. নুরজাহানও ডিউটিতে ছিলেন। রোগীর শরীরে ২০ মিলিলিটারের মতো রক্ত প্রবেশ করে। এর ১৫-২০ মিনিট পর রোগীর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হলে রোগীর স্বজনরা ও আশপাশের লোকজন ঝামেলা শুরু করার পর ডা. নুরজাহান হাসপাতাল থেকে চলে যান।’
তিনি বলেন, ‘তার চলে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজও আছে আমাদের কাছে। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করেছি। এ বিষয়ে এর বেশি বলতে পারব না। তদন্ত প্রতিবেদন আজই পরিচালক স্যারের কাছে দাখিল করেছি। আশা করছি, দোষীরা শাস্তি পাবেন। তবে, অফিসিয়াল প্রসেসিংয়ের কারণে একটু সময় লাগতে পারে।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মো. বিল্লাল নামে এক রোগীর শরীরে ‘ও’-এর বদলে ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করার পর রাত পৌনে দশটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এতে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তোলেন বিল্লালের স্বজনরা। পরদিন ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
সেই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি।