ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

১২ বছর বয়সেই আলিফের কাঁধে সংসারের ভার

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
পাপড় বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায় আলিফ। ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

মাত্র ১২ বছর বয়সেই পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে আলিফ। যখন তার সমবয়সিরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যায়, খেলাধুলায় মেতে থাকে, ঠিক তখনই আলিফ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পাপড় বিক্রির জন্য। এ যেন এক অসম বয়সে বড় হয়ে ওঠার গল্প।

আলিফের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার আদু মাস্টার বাজার এলাকায়। বাবার স্নেহ না পাওয়ার যন্ত্রণাটা তার শৈশবেই গেঁথে গেছে হৃদয়ে। আলিফের বাবা মারা যান তার ছোট বোন জন্ম নেওয়ার সময় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়। বাবার অকালমৃত্যুর পর থেকেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার মা ও তার কাঁধে। মা শ্রীপুরের মাওনা থেকে পাপড় সংগ্রহ করে এনে দেন, আর সেই পাপড় বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায় আলিফ।

প্রতিদিন সকালেই সে বেরিয়ে পড়ে হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। দোকান, বাজার, এমনকি গ্রামের পথঘাটেও তাকে দেখা যায়। দিনে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার পাপড় বিক্রি করে। তাতে লাভ থাকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ সামান্য আয় দিয়েই চলছে তিন সদস্যের ছোট্ট সংসার মা, আলিফ আর তার ছোট বোন।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে উপজেলাসংলগ্ন এলাকায় পাপড় বিক্রি করতে দেখা যায়। এ সময় আলিফ জানায়, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন থেকেই মা আমাকে পাপড় বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন।’

পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে চোখে-মুখে একরাশ আফসোস ঝরে পড়ে। সে বলে, ‘স্কুলে গেলে সংসার চালাবে কে! স্কুলে যাওয়ার সময় পাই না। যদি কখনো সময় পাই, স্কুলে যাব।’

তার কাছ থেকে পাপড় কেনা মাহফুজ রাজা জানান, আলিফের জীবনের গল্প শুধু তার একার নয়, সমাজের অনেক অবহেলিত শিশুরই গল্প এটি। শিশুশ্রমের বেড়াজালে আটকে থাকা, স্বপ্ন হারিয়ে ফেলা এমন সব শিশুর পাশে দাঁড়ানো দরকার সমাজ ও রাষ্ট্রের।

অবহেলিত এ প্রতিভাদের জন্য প্রয়োজন সহানুভূতি, প্রয়োজন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। হয়তো একটু সহায়তা পেলেই আলিফ আবারও হাতে নিতে পারবে স্কুলব্যাগ, ফিরে পেতে পারবে হারানো শৈশব।