ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

ঝিনাইদহে রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ মাটি কাটার মহোৎসব

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ মাটি কাটা ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

ভূমি আইন অমান্য করে সাংবাদিক ও পুলিশকে ম্যানেজ করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নসহ জেলাজুড়েই রাতের আঁধারে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। কৃষিজমির উর্বর মাটি ও পুকুর কেটে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়।

এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত চলে মাটি ব্যবসায়ীদের এ মহাকর্মযজ্ঞ।

আর এসব মাটি পরিবহনে ব্যবহার করা হয় অবৈধ ট্রাক্টর। মাটিবাহী এসব ট্রাক্টর থেকে সড়কে পড়ছে মাটি। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কগুলো। কাঁদায় মাখামাখি হয়ে ফিরতে হয় সড়কে চলাচলকারীদের। কিছু সাংবাদিক ও পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি রাতের জন্য অবস্থান ভেদে এক থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয় পুলিশকে। কাজের শুরুতে পুলিশকে জানালে আমাদের মাটি কাটতে একটু সুবিধা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড যদি আসে তাহলে পুলিশ আগে থেকে ফোন করে দেন আমাদের। তখন আমরা দূরে সরে যাই।

পরে তারা এসে ঘুরে যাবার পর আবারও কাজ শুরু করি। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা না হলে তারা এসে গাড়ি ধরে মামলা দেয়। তবে নামধারী কিছু ফেসবুক সাংবাদিকরা বেশি বিরক্ত করে। তাদেরও টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ঝামেলা করে তারা।

সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাটি ব্যবসায়ী প্রশান্ত গুহ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে মহিষাডাঙ্গা এলাকায় একটি পুকুর কেটে এনএসবি ও এসআরবি ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছি। প্রতি গাড়ি মাটি এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মাটি কাটার কাজ শুরু করেছি। তবে এ কাজের জন্য সাংবাদিক ও পুলিশকে কত টাকা দিতে হয়েছে তা বলতে রাজি হননি তিনি।

মহিষাডাঙ্গার পুকুর মালিক মো. হাফিজ বলেন, মাটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তারা আমার পুকুর খনন করে দেবে। খনন করে মাটি নিয়ে যাবে। তাদের কোনো টাকা দেওয়া লাগবে না। বিনা খরচে আমার পুকুর খনন হয়ে যাবে। রাতের বেলা কেন খনন করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওদের সুবিধা মতো ওরা খনন করছে।

এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সারা রাত মাটি কাটলে গাড়ির শব্দে আমরা ঘুমাতে পারি না। ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যায় এলাকা। একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদায় মাখামাখি হয়ে যায় রাস্তা। যেন সদ্য প্রস্তুত করা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যাবে। পাকা রাস্তা কেটে মাটির গাড়িগুলো ওঠার ব্যবস্থা করে তারা। এতে রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তারা আরও জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলে মাটি ব্যবসায়ীরা। কিছু বলতে গেলেই দেওয়া হয় হুমকি-ধামকি।

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, প্রেসক্লাবের বাইরে অনেক সাংবাদিক আছেন। বর্তমানে ফেসবুক ও নামধারী কিছু সাংবাদিক তৈরি হয়েছে। তারা রাতের আঁধারে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ছুটে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। নামধারী ও ফেসবুক সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকৃত সংবাদিকরা এ সব কাজের সঙ্গে কখনোই জড়িত না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে। মামলা দিয়েও তাদের থামানো যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে যারা মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।