ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

আ.লীগপন্থি ইউপি চেয়ারম্যানরা ফিরতে মরিয়া, সংঘাতের শঙ্কা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে যাওয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা ফেরার চেষ্টা করছেন।

প্রায় ৮ মাস আত্মগোপনে থাকার পর তারা আবারও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারে বসতে চান। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনও করেছেন।  

জানা যায়, জয়পুরহাটে ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগপন্থি চেয়ারম্যানরা স্বপদে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে কয়েকজন আবেদনও করেছেন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে তাদের ফেরার খবরে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলার পাঁচ উপজেলার ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ২২টিতে চেয়ারম্যান পালিয়ে যান। ইউনিয়নগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিত ও পদত্যাগজনিত কারণ দেখিয়ে তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির পদে আছেন অথবা বিএনপি সমর্থিত ইউপি সদস্যরা প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান আছেন, তাদের মধ্যে ৭ জন বিএনপি সমর্থিত। অন্যরা আওয়ামী লীগের। একটি ইউনিয়ন পরিষদে আবার চার জন ইউপি সদস্যও দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে আছেন। অন্যরা জামিনে রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে একটিতে প্রশাসক ও অন্যগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাউকে বরখাস্তও করা হয়নি। তবে তারা স্বপদে ফিরলে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার তথ্য বলছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৯টি, পাঁচবিবি উপজেলায় ৮টি, আক্কেলপুর উপজেলায় ৫টি, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫টি ও কালাই উপজেলায় ৫টি।

সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শুধু ধলাহার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান রয়েছেন। অন্য ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যান নেই। 

এর মধ্যে জামালপুর ও বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। বাকি ৬ জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। ওই ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচবিবি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে চেয়ারম্যান রয়েছেন। 

কুসুম্বা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন। এ দুটি ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। আক্কেলপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান রয়েছে।

রুকিন্দীপুর ও তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন। তিলকপুর ইউনিয়নে প্রশাসক ও রুকিন্দীপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। 

আক্কেলপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মোছা. মুনিরা সুলতানা তিলকপুর ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন। কালাই উপজেলার ৫টি ইউপির চেয়ারম্যানদের সবাই অনুপস্থিত। ইউপিগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ক্ষেতলাল উপজেলার ৫টি ইউপির সব চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। ইউপিগুলোতেও প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশাসনের এই দপ্তর সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান না থাকা ২২টি ইউপির মধ্যে ২০টির চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। এর মধ্যে ৬টি ইউপি ক্ষেতলালের বড়াইল, মামুদপুর, বড়তারা, তুলসীগঙ্গা, আক্কেলপুরের তিলকপুর ও কালাইয়ের উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্বপদে ফেরার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের সব নথিপত্র এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সবুর আলী বলেন, ৩২ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১০টিতে চেয়ারম্যান রয়েছেন। ২২ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২১টিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও একটিতে প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন।

তিন আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপদে ফেরার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।