চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের সদ্য বদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বন্দিদের খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ও বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কারা হাসপাতালের সিট বাণিজ্য, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উৎকোচ নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে তাকে বদলির পর এবার অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
রাজশাহীর কারা উপমহাপরিদর্শক মো.কামাল হোসেন অভিযোগ তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারা মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষও কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শককে অবহিত করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কারা অ্যাকাডেমিতে বদলি করা হয় শরিফুল ইসলামকে। গত ৭ এপ্রিল তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের পর উঠে আসে বন্দিদের খাবারের জন্য বরাদ্দ চাল, রান্নার জন্য বরাদ্দ খড়ি ও বিভিন্নখাতে বরাদ্দ করা টাকা আত্মসাতের বিষয়টি।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শরিফুল ইসলাম দায়িত্ব হস্তান্তরের পর ১ হাজার ৫১৫ কেজি চাল, ২৮ হাজার কেজি খড়ি এবং আসবাবপত্র, বই, ক্রীড়া সামগ্রী ও কয়েকদিনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা-খেলাধুলার উপহার সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ২২ হাজার টাকার গড়মিল পাওয়া যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানানো হয় কারা মহাপরিদর্শকের দপ্তরে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় নেতা রাতুল হাসান নিশান কারা মহাপরিদর্শকের কাছে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাঠান। রাতুল হাসান নিশান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত কারাগারে বন্দি ছিলেন।
তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, কারা হাসপাতালের প্রতিটি সিট মাসিক ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন শরিফুল ইসলাম। এ ছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে কারাগারের অভ্যন্তরে তিনি গড়ে তুলেছিলেন গরুর খামার। বন্দিদের পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে, সেই খাবার খাওয়ানো হতো খামারের গরুকে।
রাতুল হাসান বলেন, আমাদের যে খাবার দেওয়া হতো তা অত্যন্ত কম। ক্ষুধা মেটানোর জন্য আমাদের ক্যান্টিন থেকে খাবার সংগ্রহ করে খেতে হতো। ৫ আগস্টের পর শরিফুল ইসলাম এসব কর্মকান্ডের জন্য আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন । কিন্তু এরপরও তিনি ঘুষ-উৎকোচ নেওয়া থেকে বিরত হননি। এমনকি কারাবন্দি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও তিনি উৎকোচ দাবি করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত কয়েক মাসে কারা ফটকে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
রাজশাহীর কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেন, আমি এই রকম (তদন্ত সংক্রান্ত) একটি চিঠি পেয়েছি। তবে আমি এখনও সেখানে যাইনি। আমি তদন্ত করব। তদন্ত করে যদি কোনো অ্যানোমলি (অনিয়ম) পাওয়া যায়, তবে সেভাবে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব।
তিনি বলেন, চিঠিতে বিশেষ কোনো অভিযোগের কথা উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলোর তদন্ত করতে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এরই মধ্যে শরিফুল ইসলাম আত্মসাৎ করা চাল, খড়ি ও অর্থ ফেরত দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :