ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

দেশজুড়ে গাবুড়া বাজারের টমেটোর কদর

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
গাবুড়া বাজারের টমেটোর আড়ৎ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দিনাজপুরের গর্ভেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত গাবুড়া বাজার। এ বাজারের টমেটোর কদর দেশজুড়ে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় এখানে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ বাজারে টমেটো কিনতে আসেন পাইকাররা। এখানে রয়েছে শ্রমিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।

জেলার সদর উপজেলার গর্ভেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত গাবুড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এখানে টমেটোর হাট বসে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এ বাজারে টমেটোর বাজার বসে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে টমেটোর কেনাবেচা।

প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়কের উভয় পাশে অস্থায়ী আড়ৎ বানানো হয়েছে। এ বাজারে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক পাইকার আসেন টমেটো কিনতে।

ভোর থেকে চাষিরা বড় বড় খাঁচায় করে টমেটো বিক্রি করতে আসেন। টমেটো জাত-নামভেদে পাইকার ও কৃষকদের মধ্যে চলে দর কষাকষি। বিপুল প্লাস, প্রভেনসিভ, রোমা ভিএফ, মিন্টু সুপার, আনসাল, রানী এবং শক্তি প্লাস জাতের টমেটো পাওয়া যায় এ বাজারে।

দরদামে ঠিক হলে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পাইকারের আড়ৎঘরে। সেখানে ক্যারেটে ভরা হচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ক্যারেটগুলো তুলছেন শ্রমিকরা। দৈনিক শতাধিক ট্রাকে গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় গাবুড়া বাজারে।

টমেটো চাষি সমশের আলী বলেন, ‘গত বছর ফলন কম ছিল। কিন্তু দাম পাইছি ভালো। এবার ফলন ভালো হয়েছে, দামটা কম। শুরুতেই ৪০০-৫০০ টাকা মণ পাচ্ছি। দুই বিঘা মাটি বিপুল প্লাস জাতের টমেটো লাগাইছি। দুই বিঘা জমিতে লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টমেটোর কেজি ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা। এটা যদি ২০ টাকা থাকত, তাহলে বেশ লাভবান হওয়া যেত।’

ঢাকা বাদামতলি থেকে আসা পাইকার জামশেদ মিয়া বলেন, ‘এবার ঈদের দু’দিন পরেই আসছি। দৈনিক ৫-৭টি ট্রাক লোড হচ্ছে। এখানকার টমেটোর একটা সুনাম আছে। চাষিদের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক আছে আমাদের। ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মণ কিনছি।’

‘চাষিরাও দাম কম পাচ্ছে, আমরাও লাভবান হতে পারছি না। আগের তুলনায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ট্রাকভাড়া, শ্রমিকের মজুরি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। যার ফলে লাভ কম হচ্ছে।’

বাজারের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বাজারে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে বাজারের আশপাশের বাড়িভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। হাট ইজারা বাবদ প্রতি মণ টমেটোর জন্য ১৫ টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। এ কারণে হাটের পরিসর দিন দিন বাড়ছে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে গত অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছিল ৯২৫ হেক্টর জমিতে। এবার সেখানে ১ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি টমেটোর আবাদ হয় জেলার চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলায়।