পটুয়াখালীর পৌর শহরের শহীদ হৃদয় তড়ুয়া চত্বর এলাকায় পান সিগারেট বিক্রি করে চলছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তপন কুমার মালীর জীবন। অন্য দশ জন প্রতিবন্ধীর মতো ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে না নিয়ে রাস্তার পাশে বসে পান সিগারেট বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি।
সারাদিন পান, সিগারেট বিক্রির অর্থ আর প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়েই টেনেটুনে চলছে তার সংগ্রামী জীবন।
তপন মালীর বয়স ৪৬ বছর। আপনজন বলতে কেউ নেই। তিনি ও তার স্ত্রী সাথী মালির ছোট একটি সংসার।
জন্মের পর থেকেই চোখে দেখেন না তপন। সমন্বিত, অন্ধশিক্ষা প্রকল্পে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নে।
ধার-দেনা করে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ভেতরে প্লাস্টিকের দোকান দিয়েছিলেন। সেই ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর কোনো উপায় না পেয়ে সড়কের পাশে বসে একটি থালায় পান ও সিগারেট সাজিয়ে বিক্রি করছেন। এর থেকে যা পান, তা দিয়েই চলছে জীবন।
তিনি বর্তমানে পটুয়াখালীর পৌর শহরের ৬নম্বর ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।
স্থানীয় হাবীব নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘দোকানি (তপন) চোখে দেখেন না। কিন্তু পণ্যের নাম বললেই কারো সহযোগিতা ছাড়াই তা বের করে দেন। আবার সঠিকভাবে টাকাও গুনে নিচ্ছেন এবং পাওনা টাকা ফেরত দিচ্ছেন। দৃষ্টিহীন হয়েও কারো কাছে হাত না পেতে পেশা হিসেবে ব্যবসা বেছে নেওয়ায় সবসময় তার দোকান থেকে কেনাকাটা করি।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তপন মালী বলেন, ‘আমার আপন বলতে কেউ নেই। আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনেই রাস্তার পাশে পান সিগারেট বিক্রি করে সংসার চালাই। নেই থাকার কোনো জায়গা। যে টাকা কামাই করি, তা দিয়ে সংসার চালাই আর ঘর ভাড়া দিই।’
তপন বলেন, ‘ছোটকাল থেকে আমি কখনো নিজেকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ভিক্ষা বা কারো কাছে হাত পাতিনি। নিজে কর্ম করে খেতে চাই।’
আপনার মতামত লিখুন :