ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ৫ মামলা, নিজাম হাজারীসহ আসামি দেড় হাজার

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম

ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ৫ মামলা, নিজাম হাজারীসহ আসামি দেড় হাজার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলিতে নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পৃথক পাঁচটি হত্যা মামলার সবগুলোতে প্রধান আসামী ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। পাঁচটি মামলায় মোট আসামী ১ হাজার ৬২৩ জন। এরা সকলেই জেলার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে মহিপালে নিহতদের একজন ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম বাদী হয়ে ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামীরা ছাড়াও আরো ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। নিহত মাসুদ দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর গ্রামের মীর বাড়ির মো. শাহজাহান টিপুর ছেলে। নিহতের চাচা মো. আবদুল কাদের জিলানী মামলা দায়েরের বিষযটি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে একইস্থানের সংঘঠিত ঘটনায় নিহত ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের দাদা মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বাদী হয়ে ১০৯ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় নিজাম হাজারী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৩০ জনের অধিক জনপ্রতিনিধিকে আসামাী করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫০-২০০ জনকে। ফেনী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি। অন্যদিকে মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গুলিতে নিহতের ঘটনায় প্রথম মামলাটি দায়ের করেন হত্যাকান্ডের শিকার অটোরিকশা চালক মো. সবুজের ভাই ইউসুফ। গত মঙ্গলবার দুপুরে ফেনী মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটিতে ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৪’শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে মামলার প্রধান আসামী হন ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। এতে নিজাম হাজারী ছাড়াও ৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১ জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইজন পৌর মেয়র, ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ১১ জন পৌর কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক ৫ মামলায় পুলিশ কাজ শুরু করেছে। হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জানে আলম, ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার আহম্মদ মুন্সী উল্লেখযোগ্য। এর আগে বুধবার রাতে নিহত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাইদুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ফেনী মডেল থানায়। মামলায় ছাত্রদের দিকে গুলি করার নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ ও যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু প্রমুখ। নিহত ছাইদুল ফেনী সদর উপজেলার উত্তর ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, মামলাটিতে নিজাম হাজারীসহ ৯৪ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১০০-১৫০ জন।

প্রসঙ্গত; গত ৪ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। দুপুর দুইটার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত করে তোলে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা গোলাগুলি ও সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হন। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ ও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক।

আরবি/জেডআর

Link copied!