শীতের আভাস আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে থাকেন। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু। প্রায় প্রতিটি সবজি বা মাছ রান্নায় দিলে বেড়ে যায় স্বাদ। খুব সহজেই গ্রামের নারীরা এই বড়ি তৈরি করে থাকেন।
গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তার দু’পাশে ছোট-ছোট টিনের চালায় রোদে শুকানো হচ্ছে হলুদ রঙের কুমড়ো বড়ি। বাড়ির উঠানে বসে গ্রামের নারীরা তৈরী করেন স্বাদে ভরপুর ও ঐতিহ্যবাহী কুমড়ো বড়ি। গাছপাকা চালকুমড়া কুচি কুচি করে কেটে ও মাষকলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে একসঙ্গে মেশিনে ভাঙিয়ে সেই ডালে পানি, কালোজিরা ও অন্যান্য মসলা মিশিয়ে নিয়ে টিনের চালে গুটি গুটি করে কুমড়ো বড়ি দিচ্ছেন। মেয়েদের কুমড়ো বড়ি তৈরীর এমন দৃশ্য নাটোরের সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পুন্ডরী গ্রামের।
ছয় বছর ধরে এই গ্রামের আটজন নারী উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরী করছেন। শীতের ৪ থেকে ৫ মাস কুমড়ো বড়ি তৈরী করে সংসারের বাড়তি আয় করছেন তারা।
নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, সব খরচ বাদে মৌসুমে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয় তাদের। এতে অনেকের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। বদলে গেছে একসময়ের অভাব-অনটন সংসারের হালচিত্র।
সরেজমিনে পুন্ডরী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে কুমড়ো বড়ি তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। সাধারণত কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ছোট-বড় সব বয়সি নারীরাই এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন।
পুন্ডরী গ্রামের উদ্যোক্তা রাশেদা বেগম জানান, তার বাবার বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল এলাকায়। সেখান থেকেই কুমড়ো বড়ি তৈরীর কাজ শিখেছেন তিনি। বিয়ের পর স্বামীর সংসারের অভাব দেখা দিলে কুমড়ো বড়ি তৈরী করে বিক্রির কথা ভাবেন। প্রথমে অল্প পরিমাণ কুমড়ো বড়ি তৈরী করে বাজারে বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। তাতে লাভবান হওয়ায় স্বামীর সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরি শুরু করেন রাশেদা বেগম।
তিনি আরও বলেন, তার সফলতা দেখে এই গ্রামের নারীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরী করা শুরু করেন। রাশেদা বেগম ছাড়াও পুন্ডরী গ্রামের নুরজাহান বেগম, আলেয়া বেগম ও কাজলী বেগমসহ আট নারী উদ্যোক্তা এখন কুমড়োবড়ি তৈরী করে সংসারের বাড়তি আয় করছেন।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ কেজি থেকে ২৫০ কেজি ডালের কুমড়ো বড়ি তৈরী করছেন এ গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে রাশেদা বেগম একাই তৈরি করেন ৫০ থেকে ৬০ কেজি ডালের কুমড়ো বড়ি।
নারী উদ্যোক্তারা জানায়, প্রতি কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরী করতে তাদের খরচ হয় ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। বাজারে পাইকারী বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, খুচরা বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। এতে খরচ বাদে প্রতি কেজিতে লাভ হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
সিংড়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পুন্ডরী গ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরী কুমড়ো বড়ি খেতে ভালো লাগে বলে বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাঙালির খাদ্য তালিকায় কুমড়ো বড়ি বেশ জনপ্রিয়। উন্নত বাজার ব্যবস্থা ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা আরো বেশি উৎসাহী হয়ে এই কাজে আত্মনিয়োগ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :