ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

হত্যাসহ ৯ মামলা মুক্তিযোদ্ধা কানুর, আছে মারধর করে পানিতে ফেলার অভিযোগ

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৮:২১ পিএম

হত্যাসহ ৯ মামলা মুক্তিযোদ্ধা কানুর, আছে মারধর করে পানিতে ফেলার অভিযোগ

ফাইল ছবি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভূঁইয়া কানুকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য আওয়ামী লীগ আমলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে প্রায় ১০ বছর গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন।

এছাড়া, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সময়ই হত্যাসহ অন্তত ৯ মামলা রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাড়িতে এসে আত্মগোপন করে ছিলেন।

গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ির বাইরে বের হলে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাকে লাঞ্ছিত করেন। তবে কেন তাকে লাঞ্ছিত করা হলো এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

তবে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তিকে মারধর করেছিলেন কানু। এমনকি ওই ভুক্তভোগীকে পানিতে ফেলে অপমান-অপদস্তও করেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। সেই ঘটনার জেরেই কানু হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আকতার উজ জামান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২০০৮ সালে স্থানীয় কুলিয়ারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন চলাকালীন স্থানীয় আব্দুল হালিম নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করেন আলোচিত আওয়ামী নেতা কানু। শুধু তাই নয়, এই মুক্তিযোদ্ধা ওই ব্যক্তিকে টেনে নিয়ে পানিতে ফেলে অপমান-অপদস্ত করেন। চলতি বছর আব্দুল হালিম মারা যান।

ভাইয়ের ওই অপমানকে কেন্দ্র করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারা গ্রামের অভিযুক্ত আবুল হাশেম মুক্তিযোদ্ধা কানুকে স্থানীয় বাজারে দেখতে পান গত ২২ ডিসেম্বর। এরপর তাকে জোরপূর্বক ধরে সেই কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এনে স্থানীয় লোকজনের সামনে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজন ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা ভাইরাল হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাই কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহ-সভাপতি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পক্ষে রাজনীতি করে প্রতিপক্ষ নেতাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেন। এমনকি তার বাড়ির আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছিলেন বলে জানা যায়।

তবে একটা সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কানু মুজিবুল হকের বিপক্ষ গ্রুপে চলে যান। পরে বিপক্ষ গ্রুপের হওয়ায় প্রতিপক্ষ্যের লোকদের পিটুনির ভয়ে প্রায় ১০ বছর এলাকাছাড়া ছিলেন।

এছাড়া, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একযুগ আগে একটি অনুষ্ঠানের খাবার টেবিল থেকে জামায়াতের অনুসারী এক ব্যবসায়ীকে জোর করে তুলে এলাকাছাড়া করেছিল তিনি। এরপর ওই ব্যবসায়ী বহু বছর গ্রামের ফিরতে পারেননি। এমনকি স্থানীয় জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে এলাকাছাড়া করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা কানু।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্য প্রযুক্তি, মারামারি ও রাজনৈতিকসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে।

আরবি/এইচএম

Link copied!