বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


তাপস মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম

বরগুনায় রাজাকারের ছেলে ৯ বছরের মুক্তিযোদ্ধা, কোটায় মেয়ের চাকুরি

তাপস মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম

বরগুনায় রাজাকারের ছেলে ৯ বছরের মুক্তিযোদ্ধা, কোটায় মেয়ের চাকুরি

শিশু মুক্তিযোদ্ধার সৈয়দ মো. মাসুম। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনা: বরগুনা আমতলীতে নয় বছর ১ মাস ১২ দিনের শিশু মুক্তিযোদ্ধার হদিস পাওয়া গেছে। শিশু মুক্তিযোদ্ধার নাম সৈয়দ মো. মাসুম। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে তার প্রদত্ত গেজেট নং ৪২৩। এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী স্বাধীনতা যুদ্ধে তার বাবা ছিলেন রাজাকার এবং তিনি ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। 

অভিযোগ রয়েছে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার মেয়ে ইসরাত মৌরির হয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী। অভিযোগ রয়েছে তিনি জন্ম তারিখ দুইবার দেখিয়ে করেছেন চাকরি। 

মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সরকারি অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি গত ১১ বছরে সরকারী কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার ভাতা উত্তোলন করার পাশাপাশি নিয়েছেন নানান সুযোগ সুবিধা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন আমতলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে সৈয়দ মো. মাসুম নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে বলেন, আমি ১৯৭৪ সালে আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছি। পরে ছয় বছর লেখাপড়া করিনি। ১৯৮০ সালে চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার দুটি জন্ম তারিখ। এসএসসি সনদ অনুসানে আমার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সাল হলেও আমার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৫৬ সাল। তবে আপনী কেন আগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তুভুক্ত না হয়ে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়ে ভাতাপ্রাপ্ত হয়েছেন এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। মোঃ মাসুম এসএসসি পাশের সনদ অনুসারে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী শেষে অবসরে গেলেন আবার ১৯৫৬ সালের জন্ম তারিখ অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা হলে কোনটা সঠিক বয়স এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার দুই জন্ম তারিখই সঠিক বলে দাবী করেন তিনি। 

জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরের খাদ্যগুদাম এলাকার সৈয়দ লুৎফর রহমানের ছেলে সৈয়দ মাসুম। তিনি ১৯৮০ সালে চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পাশের সনদ অনুসারে তার জন্ম ১৯৬২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল নয় বছর ১ মাস ১২ দিন। তখন তিনি প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। 

এব্যাপারে অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন সৈয়দ মো. মাসুমের বাবা সৈয়দ লুৎফর রহমানের গ্রামের বাড়ী ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা গ্রামে। তিনি ছিলেন ওই এলাকার চিহিৃত রাজাকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আমতলী আসেন। পরে আমতলী পৌরসভার খাদ্যগুদাম এলাকায় বসবাস এবং মুদি মনোহরি ব্যবসা শুরু করেন। তার ছেলে সৈয়দ মাসুম ১৯৮০ সালে চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে সবুজবাগ মুক্তিযোদ্ধা বে-সরকারী প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী নেন। ২০১৩ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। অভিযোগ রয়েছে তিনি (মাসুম) ওই সময় ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমামের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে  মুক্তিযোদ্ধা হন এবং অনেকের কাছে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। জাল জালিয়াতি করে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজেটভুক্ত হন। তার গেজেট নং-৪২৩। ওই গেজেট অনুসারে তিনি ২০১৩ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্ত হন। গত ১১ বছর তিনি অবৈধভাবে সরকারী কোষাগার  থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাতা নিজ অনূকূলে উত্তোলন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম আরো  বলেন মাসুম এসএসসি পরীক্ষা পাশের সনদ গোপন করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে তার মেয়ে ইসরাত মৌরি মুক্তিযোদ্ধা কোটার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী নিয়েছেন। বর্তমানে মৌরি আমতলী সবুজবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। 

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, সৈয়দ মোঃ মাসুম ১৯৮০ সালে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তার এসএসসি পরীক্ষা পাশের রোল নং-৩৯৫, নিবন্ধন নং-১৮৮১২ ও শিক্ষাবর্ষ ১৯৭৭-৭৮ এবং তার জন্ম তারিখ-১৯৬২-০২-০১৫। তিনি ২০১৯ সালে সবুজবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। তিনি গত দুই বছর পুর্বে আমতলীতে বসতবাড়ি বিক্রি করে ফরিদপুর জেলার সৈয়দপুর উপজেলার তালমা গ্রামে চলে যান। বর্তমানে তিনি সেখানে বসবাস করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সৈয়দ লুৎফর রহমান আমতলী শহরে আসেন। পরে শহরের খাদ্যগুদাম এলাকায় বসবাস এবং মুদিমনোহরি ব্যবসা শুরু করেন। তখন তার ছেলে সৈয়দ মাসুম প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিশু। লেখাপড়া শেষে তিনি সবুজবাগ বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী নেন। ২০১৩ সালে জানতে পারি তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে তিনি তার মেয়ে মৌরিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী দিয়েছেন।  

চিলা হাসেম বিশ্বাস  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সৈয়দ লুৎফর রহমানের ছেলে সৈয়দ মো.মাসুম ১৯৮০ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী।  

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!