চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলার ৯৪টি ইটভাটার পতিত জমির মাঠগুলো এখন সবুজ ফসলে ভরে গেছে। ইটভাটার জমিতে ফসল চাষ হয় না-এ ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন চুয়াডাঙ্গার ইটভাটার মালিকরা। বছরের যে সময়টায় ইট পোড়ানো বন্ধ থাকে, সে সময় পতিত জমিতে ধান চাষ করে সফল তারা। বছরের অর্ধেক সময় ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হয় ইট। বাকী অর্ধেক সময় এসব জমি আগে পড়েই থাকতো। এখন ৩৯০ বিঘা জমিতে ধান, মিষ্টি কুমড়া, কলাসহ নানা ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় পাঁচ মাস ইটভাটা বন্ধ থাকায় কর্মহীন শ্রমিকদের কথা ভেবেই ইটভাটার মালিকরা পতিত জমিতে চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা যেমন হচ্ছে, তেমনি দেশের খাদ্য ঘাটতিও কিছুটা পূরণ হচ্ছে। পতিত জমি চাষের আওতায় আসায় মালিক ও শ্রমিক উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বছর ইটভাটায় ধান ও ফসল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় ৩৯০ বিঘা জমিতে ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে। প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সব ফসল ও সবজি প্রায় এক কোটি টাকায় বিক্রি হবে। পতিত জমিতে ফসল চাষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২সালে সর্ব প্রথম চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটার পতিত ২৮০ বিঘা জমিতে ধান চাষ শুরু হয়। সে সময় দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এই উদ্যোগ নেন। উর্বর জমি হওয়ায় ফসল উৎপাদন ভাল হয়। লাভবান হওয়ায় ইট বিক্রির পাশাপাশি ভাটা মালিকরাও আগ্রহী হন পতিত জমিতে ফসল চাষে। এসব জমিতে চাষাবাদ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩সালে ইটভাটার ২৯০বিঘা এবং ২০২৪সালে ৩৯০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় ৩৯০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৭৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান এবং ১৫বিঘা জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। ৩৭৫ বিঘা জমির মধ্যে সদর উপজেলায় ৮৫বিঘা, আলমডাঙ্গায় ৩৫বিঘা, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৫০ এবং জীবননগর উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ হচ্ছে।
বৈশাখ মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায় চুয়াডাঙ্গার সকল ইটভাটার ইট উৎপাদন কার্যক্রম। এ সময় পতিত জমিগুলো চাষের আওতায় আসছে প্রতি বছর। জেলার ৯৪টি ইটভাটার আওতায় রয়েছে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি। সকল ভাটা চাষের আওতায় আসলে খাদ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পিয়াস ইটভাটার মালিক পিয়াস বলেন, ভাটায় ১২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। শ্রমিকদের নিয়ে পরিচর্যা করতে হয়। গত বছর ধান চাষ করেছিলাম এবার ও করেছি এ বছর প্রতি মন ধান বাজারে ১২০০-১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধান চাষ লাভজনক বলে জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, ইটভাটার জমিগুলো এক সময় পড়ে থাকতো। এখন চাষের আওতায় আসছে। ভাটা বন্ধের সময় ধান, সবজি, ফলসহ অনেক কিছুই আবাদ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসগুলো মালিকদের চাষে আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এবার ৩৯০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। ইটভাটার সব পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :